নিজস্ব প্রতিবেদক »
অস্থির পেঁয়াজের বাজারে প্রশাসনের টানা তিনদিনের অভিযানে পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমে আসলেও খুচরা বাজারে দাম বাড়তি। সোমবার জেলা প্রশাসন থেকে ব্যবসায়ীদের হঁশিয়ারি করা হলেও খাতুনগঞ্জের অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদার পেঁয়াজ কেনা ও বিক্রি বন্ধ রেখেছে। আর খুচরা বাজারগুলোতে এখনো সেই চড়া দামে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ১৯০ টাকায়। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা কেজিতে। শুক্রবার খুচরা বাজারে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ শনিবার সকালে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় উঠেছিল।
অন্যদিকে পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে টানা তিনদিন ধরে অভিযান পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তর।
অভিযানে বাড়তি দামে বিক্রি করার দায়ে ১৬ মামলায় ১২ পেঁয়াজ বিক্রির প্রতিষ্ঠানকে ৯৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে অর্ধ শতাধিক পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর চাক্তাই, রেয়াজুদ্দিন বাজার, দুনম্বর গেইটের কর্ণফুলী মার্কেট, পাহাড়তলী বাজার ও আগ্রাবাদের চৌমুহনী এলাকার কর্ণফুলী মার্কেটে ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রটের পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে চান্দগাঁও কামাল বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
জানা যায়, পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নগরীর বিভিন্নস্থান ও উপজেলায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে মূল্যতালিকা না টাঙানো ও গুদাম থেকে পেঁয়াজ সরিয়ে রাখা, ক্রয় বিক্রয় চালানসহ নানা কারণে ১৬ টি মামলায় ৬৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে পেঁয়াজের মূল্য, মজুদ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকার কর্ণফুলী মার্কেটের প্রায় অর্ধশত দোকানকে সতর্ক করেছেন এবং একজন ক্রেতাকে ২ কেজির বেশি পেঁয়াজ যেন বিক্রি করা না হয় সে ব্যাপারেও সচেতন করেন। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে মূল্য বর্তমান পেঁয়াজের মজুদ অনুযায়ী ১২০ টাকার বেশি যাতে বিক্রি না করে সেজন্য মার্কেটের সকল ব্যবসায়ীকে সতর্ক করেন।
অন্যদিকে পাহাড়তলী বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিমাদ্রী খীসা। এ সময় তিনি ৮ মামলায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক ২ নম্বর গেট এলাকার কর্ণফুলী বাজারে ক্রয় বিক্রয় রসিদ সংরক্ষণ ও উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে ফিরোজ স্টোরকে ১০ হাজার টাকা এবং খাজা স্টোরকে ২০ হাজার টাকাসহ মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল ইসলাম চাক্তাই বাজারে অভিযান পরিচালনাকালে ১ মামলায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুল ইসলাম। এ অভিযানে ২ ব্যবসায়ীকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
কাজীর দেউড়ি বাজারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌস আরা’র নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনাকালে ৩ মামলায় ৬ হাজার টাকা জরিমানাসহ জেলা প্রশাসনের সর্বমোট ১৬ মামলায় ৬৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অন্যদিকে চান্দগাঁও এলাকার কামালবাজার এলাকার আলহা ট্রেডিংকে ১৫ হাজার, ফয়সাল স্টোরকে ৩ হাজার, মোহছেন আউলিয়া বানিজ্যালয়কে ৮ হাজারসহ ৪ প্রতিষ্ঠানকে ২৯হাজার টাকা জরিমানা করেন ভোক্তা অধিকার। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা সহকারী পরিচালক নাসরিন আকতার, বিভাগীয় কার্যালয় সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান ও রানা দেবনাথ।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিমাদ্রী খীসা বলেন, পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, তারা খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পেঁয়াজ চড়া দামে কিনেছে বলে দাবি করেন। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের বিল ভাউচারও রাখেননি।
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে বাংলাদেশে দাম বেড়ে যাওয়ার মত ঘটনা গত কয়েক বছরে একাধিকবার ঘটেছে। কিন্তু এর সমাধান কেন বের করা যাচ্ছে না, এক প্রশ্নের জবাবে ভোক্তা অধিকারের বিভাগীয় উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে, পণ্য সরিয়ে রেখে বাজারে সাজানো কৃত্রিম সংকট এই পরিস্থিতি তৈরি করছে। ব্যবসায়ীরা আন্তরিক না হলে বাজার অস্থিরতা কখনো কাটানো সম্ভব।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাইকারি বাজারের পাশাপাশি খুচরা বাজারেও মনিটরিং করা হচ্ছে। ১৫টি উপজেলা ও মহানগরে ২১জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাজার মনিটরিংসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন। দাম নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে।