রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
মিরসরাইয়ে আবাস সংকোচন ও খাবারের সংকটের কারণে পাহাড় থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে আটকা পড়ছে অজগরসহ নানা প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গত এক বছরে ১৫ টিরও বেশি অজগর লোকালয়ে ঢুকে আটকা পড়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই আটকা পড়েছেন পাহাড়ি অঞ্চলে আশপাশে কৃষি জমির ফসলের ক্ষেতের সুরক্ষার জালে। চলতি বছরে শুধু উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে আটকা পড়েছে ৩টি অজগর।
সর্বশেষ উপজেলার বুধবার উপজেলার দুর্গপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী এলাকায় বসবাড়ি আঙিনায় জালে আটকা পড়া অবস্থায় ১২ ফিট দৈর্ঘ্যের একটি অজগর সাপ উদ্ধার করে ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিমের সদস্যরা। অক্ষত অবস্থায় অজগরটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ মহামায়ভর বনে অবমুক্ত করা হয়। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ছত্তরুয়া এলাকা থেকে ১৩ ফিট দৈর্ঘ্যের আরেকটি অজগর উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করে করেরহাট রেঞ্জের কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় বছরে অর্ধ সহ¯্রাধিক সাপ লোকালয়ে ঢুকে পড়েন। ১৬৫টি সাপ লোকালয় থেকে উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করেছে বন বিভাগ ও রেসকিউ টিমের সদস্যরা।
প্রাণীবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সরীসৃপ প্রাণী বিচরণ করা অঞ্চলগুলোতে দিন দিন খাদ্যের পাশাপাশি পানি সংকটও দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় ঝিরি-ঝরনা বছরের বেশিরভাগ সময় শুকিয়ে থাকছে। খাদ্যের খোঁজে প্রণীরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ে প্রাণও হারাচ্ছেন।
বন্যপ্রাণী ও সাপ উদ্ধারকারী সংগঠন ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেস্কিউ টিম ইন বাংলাদেশ (ডব্লিউএসআরটিবিডি) মিরসরাই এর তথ্য মতে, গত এক বছরে মিরসরাইয়ে জীবিত উদ্ধারকৃত সাপের সংখ্যা ১৫০ এর অধিক; যার মধ্যে অজগর ১৫টি। যার মধ্যে বিষধর সাপের মধ্যে রয়েছে; পদ্ম গোখরা, বড় কৃষ্ণ কালাচ, শঙ্খিনী, সবুজ বোড়া। আর বিষ নেই এমন সাপের মধ্যে অজগর, দাঁড়াশ, দুধরাজ, ঘরগিন্নিœ, লাউডগা, হেলে, বেত আঁচড়া সহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ রয়েছে। সবচেয়ে বেশী সাপ উদ্ধার হয়েছে করেরহাট, জোরারগঞ্জ, দুর্গাপুর ৩টি ইউনিয়নে।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মতে চলতি বছরের ১০ মাসে উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় প্রায় ৪ শতাধিক মানুষকে সাপে কেটেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ মারা গেছেন সপ্তম শ্রেণীতে পড়–য়া জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের শিক্ষার্থী সীমান্ত নাথ।
মিরসরাই বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহানশাহ নওশাদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে লোকালয়ে অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ খাদ্যের অভাবে পাহাড়ের নিকটবর্তী কৃষি, লোকালয় মানুষের বসত বাড়ির আঙিনা এসে আটকা পড়ছে। গত ১ বছরে মিরসরাইয়ে ১৫টি অজগর লোকালয়ে ঢুকেছে। যার সবগুলোই স্নেক রেসকিউ টিমের সহযোগিতায় পাহাড়ি বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী ও সাপ উদ্ধারকারী সংগঠন ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেস্কিউ টিম ইন বাংলাদেশ এর সিনিয়র রেসকিউয়ার ও সংগঠনটির চট্টগ্রাম জেলার প্রতিনিধি মো. নাইমুল ইসলাম নিলয় বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য স্নেক রেসকিউ এর কাজগুলো স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে নিজ খরচে করি। এজন্য আমাদের বনবিভাগ কিংবা সরকারিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা করা হয় না। যদি সাহায্য সহযোগিতা পেতাম তাহলে কাজগুলো আরো ত্বরান্বিত হতো।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিরুল ফরিদ বলেন, উদ্ধারকৃত অজগর ও অন্যান্য সাপগুলোর দেহে কোন ধরনের ক্ষত ও বড় ধরনের আঘাত ছিলনা। সাধারণত কোন প্রাণী আঘাত প্রাপ্ত হলে পর্যাবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আঘাত না থাকায় চিকিৎসার প্রয়োজন হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, যে কোন বন্যপ্রাণীর আবাস ঝুঁকির মুখে থাকলে এবং খাবারের সংকট হলে তারা লোকালয়ে বেরিয়ে আসে।