সুপ্রভাত ডেস্ক »
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবাইকে মনে রাখতে হবে, দেশের জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও আমরা তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।’ গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি গাজীপুরে ব্রি-তে বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
বৈশ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যশস্যের ফলন বাড়াতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কৃষিবিদদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, আমাদের নিজেদের খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতেও বাংলাদেশকে ঐতিহ্যগত শস্যের পাশাপাশি নতুন জাতের শস্য উৎপাদন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ শুধু খাদ্যশস্য উৎপাদনেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেনি, বরং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যও উৎপাদন করে যাচ্ছে। আমাদের দেশ পরচতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুদ্ধে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তাই সরকার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে, আমরা ন্যানো-প্রযুক্তি, বায়ো-ইনফরমেটিকস, মেশিন, ইন্টারনেট ও অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের এই প্রযুক্তিগুলো কাজেও লাগাতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে স্বনির্ভর করে এবং বছরে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি মিটিয়ে খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ পুনরায় খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয়।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেই দেশে ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি পায়। আওয়ামী লীগ সরকার এ অবস্থা মোকাবিলায় কৃষি গবেষণা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং কৃষকদের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল বীজ-সার বিতরণ করে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়। এই উদ্যোগের ফলে আমরা খারাপ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে সামনে এগিয়ে যাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ফসল চাষ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় কৃষি উৎপাদন পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রি উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। এ পর্যন্ত ১১১ ধরনের ধানের আধুনিক জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ১০৪টি ইনব্রিড এবং সাতটি হাইব্রিড। এর মধ্যে ২৪টি বিভিন্ন প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত রয়েছে। যার ১০টি লবণাক্ততা সহিষ্ণু, তিনিটি ডুবে যাওয়া সহিষ্ণু, তিনটি খরা সহিষ্ণু, চারটি শীত সহিষ্ণু, দুটি জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাওয়া সহিষ্ণু, একটি আধা গভীর জল এবং দ্বৈত সহিষ্ণু (সাল+সাব)।
এ ছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ১৩টি প্রিমিয়াম মানের, পাঁচটি জেডএন সমৃদ্ধ ও তিনটি নি¤œ জিআই মানের (গ্লাইসেমিক ইনডেক্স) ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশের মোট ধানি জমির ৮০ শতাংশেরও বেশি ব্রি ধানের চাষ করা হচ্ছে। জাতীয় ধান উৎপাদনে এর অবদান প্রায় ৯১ শতাংশ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে একটি মাত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। এর মধ্যে দুটি করা হয়েছে কৃষি শিক্ষার জন্য। এ দুটি হচ্ছে দিনাজপুর হাজী দানেশ ও পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের সরকার শেরে বাংলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে সরকার কৃষি গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। পাশাপাশি, সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বিজ্ঞান গবেষণায়ও দৃষ্টি দিয়েছে।’
কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে ব্রি-র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ‘ব্রি-র ৫০ বছরের গর্ব ও সাফল্য’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী ব্রি-তে আগমন করে সেখানে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়াও তিনি ব্রি-র সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দেন।
এ সময় কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জিন বালি, গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অ্যান্ড চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার স্টেভেন ওয়েব অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।