নিজস্ব প্রতিবেদক »
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বলেছেন, খাতুনগঞ্জ বাণিজ্যের হৃদস্পন্দন। সুতরাং এখানকার অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে সর্বোত্তম উপায় আমাদেরকে জানাবেন। আমরা আপনাদের মত করে সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করবো। যেকোনো উপায়ে খাতুনগঞ্জের গৌরব আমাদের ফেরাতে হবে।
তিনি গতকাল সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে ‘খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’এর অনুদান গ্রহণ ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় বৈষম্যের অভিযোগ
মতবিনিময় সভায় খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ধরেন। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, পণ্য আমদানির অনুমতি, ব্যাংক ঋণ সবকিছুর জন্য ঢাকার মুখাপেক্ষী হওয়ায় বাড়ছে খরচ। ব্যক্তিগত প্রভাব না থাকলে পণ্য আমদানিতে ডলারের বিনিময় হারেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।
কোন ব্যাংকে ডলারের দর ১২০ টাকা, আবার অন্য কোন ব্যাংকে ডলার প্রতি দিতে হচ্ছে ১২২ টাকা। ফলে বাড়ছে পণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সারাদেশে মহাসড়কে ১৮ থেকে ২০ টন পণ্য পরবিহনের সুযোগ পান ব্যবসায়ীরা। অথচ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই শঙ্কায় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২ থেকে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করা যায় না। বাড়তি পরিবহন খরচের কারণে অন্য অঞ্চলের সঙ্গে পণ্যের দামে দেড় থেকে দুই টাকা ব্যবধান থাকে।
এতে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যেও কেন্দ্রস্থল হলেও আইনি বিরোধ নিষ্পত্তিতে নেই হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চ।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ‘এখনই সংস্কারের সবচেয়ে সঠিক সময়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে দেশ পিছিয়ে যাবে।’ সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাইলে, ব্যবসায়ীদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে সংস্কারের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। চট্টগ্রামে অপ্রয়োজনীয় উন্নয়নে হয়েছে মন্তব্য করে বলেন, প্রয়োজন না থাকলেও ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ করে কর্নফুলী নদীর তলদেশে টানেল তৈরি করা হয়েছে, যা কোন কাজ আসছে না। মুক্তিযুদ্ধ, দুর্যোগ, ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই আজম বীর প্রতীক বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দিয়ে টানেল হয়েছে । এটা কার জন্য হয়েছে, কী হয়েছে, কারা চাপিয়ে দিয়েছে, পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট এমন ছিল, আমাদের এখানের প্রশাসকরা কিছু বলে নাই এবং ক্ষমতাধর সব প্রক্রিয়াগুলোই ছিল গণমানুষের বিরুদ্ধে।’
চট্টগ্রামের চেম্বারে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার কাদের শাসন করার কথা, বিগত দিনে কারা শাসন করেছে। অথচ এটা ব্যবসায়ীদের সংগঠন। সেজন্য বাণিজ্যে কোথায় বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা তা ব্যবসায়ীদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।
কোন ব্যক্তি বা সরকারের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। আপনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্যবসা বাণিজ্যে আমুল সংস্কার হবে।
আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর আন্তরিক চেষ্টা থাকলেও সরকারকে বিব্রত করতে একটি মহল দুর্গোৎসবে অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে খাতুনগঞ্জে ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রায় ৬৪ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর, সাধারণ সম্পাদক ছগীর আহম্মেদ, উপদেষ্টা তৈয়বুর রহমান, সহ-সভাপতি আবদুস সালাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক আহমদ রশিদ আমু প্রমুখ।