নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি :
খাগড়াছড়ির এইচ এম পার্বত্য হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে অনিয়মের পাহাড় জমেছে। প্রতিষ্ঠানটি অধ্যক্ষ ডা. এ কে এম তোফায়েল আহম্মদের বিরুদ্ধের কলেজের কোটি টাকা আত্মসাৎ, সহকর্মীদের বেতন না দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়মবর্হিভূতভাবে অর্থ ব্যয়, ভুয়া কর্মকর্তা কর্মচারী দেখিয়ে তাদের নামে বেতন উত্তোলনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি নারী সহকর্মীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে তিনি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তোফায়েলের বিরুদ্ধে লাগাতার দুর্নীতি ও অনিয়ম তদনেত্ম গঠিত হয় ৫ সদস্যের তদৗল্প কমিটি। অভিযোগ রয়েছে তদনত্ম কমিটিকে কোন প্রকার সহযোগিতা করছে না ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। কলেজের আয়-ব্যয়ের কোন হিসেবই দিতে পারছে না তিনি।
কমিটির তদনেত্ম উঠে এসেছে ব্যা্পক অনিয়ম। কলেজের আয় এবং ব্যাংক হিসেবে ব্যাপক ফারাক পাওয়া গেছে। কলেজের আয়ের সব টাকা ব্যাংকে জমা হয়নি। কমিটি সূত্রে জানা যায়,‘ এইচ এম পার্বত্য হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এর ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ব্যালেন্স দেখানো হয় ৪৩ লাখ ২৮ হাজার ২৩ টাকা অথচ কলেজের ব্যাংক হিসেবে জমা দেখানো হয়েছে ১৭ লাখ ৫২ হাজার ৮শ ৬ টাকা। ঐ সেশনের বাকী ২৫ লাখ ৭৫ হাজার ২শ ১৭ টাকার কোন হিসেব পাওয়া যায়নি। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে কলেজের আয় ছিল ৫৯ লাখ ৯৭ হাজার ৯১ টাকা এর মধ্যে ব্যাংকে জমা পড়েছে ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ২শ৫৪ টাকা। অর্থাৎ এই সেশনে ৩০ লাখ ৫৭ হাজার ৮শ ৩৭ টাকার হদিস পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা পরবর্তী অর্থবছরেও, ২০১৮ -১৯ অর্থ বছরেও ৪৭ লাখ টাকা কলেজের ব্যালেন্সে দেখানো হলেও ব্যাংকে জমা হয়েছে মাত্র ১৬ লাখ টাকা বাদবাকী ৩০ লাখ টাকার কোন হিসেব পাওয়া য়ায়নি। এভাবে কলেজ ফান্ডের টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছে।
হোমিওপ্যাথি কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য অ্যাডভোকেট আকতার মামুন চৌধুরী জানান , ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তোাফায়েল একটি কলেজকে কুড়্গিগত করেছে। তিনি কলেজের কোটি টাকার উপরে আত্মসাৎ করেছে। কলেজের উন্নয়ন এর জন্য হোমিও প্যাথি বোর্ড থেকে প্রদত্ত ৫ লাখ টাকা, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন থেকে প্রদত্ত ৫ লাখ টাকা এবং জেলা প্রশাসকের তহবিল থেকে প্রাপ্ত ১ লাখ টাকার যথাযথ ব্যবহার করেনি তিনি। এছাড়া বিভিন্ন নিয়োগের নামে অনত্মত ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হলেও পরিপূর্ণ অধ্যড়্গের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। পরিচালনার কমিটির অনুমতি ছাড়া বেআইনীভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে। কলেজের টাকা নয়ছয় করে অর্থসম্পদের মালিক হয়েছে। কমিটির অনুমোন ছাড়া নিজের স্ত্রীকে কলেজের নিয়োগ দিয়ে বেতন উত্তোলন করছে। ’
এছাড়া ডা.রীতা রানী ভৌমিক নামে কলেজের এক সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার এর বেতনও আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী আমার বেতন পাওয়ায় কথা থাকলেও অধ্যক্ষ আমাকে তা দেয়নি। ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন দিয়ে বাকী টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছে। আমার বেতনের অর্থ আত্মসাৎ এবং ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন না দেওয়ায় ২০১৯ সালে ডিসেম্বর এর পর থেকে বেতন উত্তোলন বন্ধ রেখেছি। দুই বছরে তিনি আমার বেতনের প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আত্মাসাৎ করেছে। এছাড়া ছয়মাসে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও তা তিনি দেননি। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলায় কলেজ অধ্যক্ষ আমাকে ধর্ষণের হুমকিও দিয়েছে।’
কলেজের বিভিন্ন খাত থেকে আয় হওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা কেন ব্যাংকে জমা রাখেনি সেই্ বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. এ কে এম তোফায়েল আহম্মদ। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে তিনি। তিনি আরো বলেন,‘সামনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন হবে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হওয়ায় জন্য আমারা বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে।
কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান ,‘ হোমিপ্যাথি কলেজ অধ্যড়্গের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। তার বিরুদ্ধে তদনত্ম করার জন্য অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (শিড়্গা ও আইসিটি) কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে রির্পোটের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’