সাগর আহমেদ »
খরগোশ ও কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতার কাহিনি তো আমরা ছোটবেলায় সবাই পড়েছি। খরগোশ ও কচ্ছপের মধ্যে তিনবার দৌড় প্রতিযোগিতা হয়েছিল। প্রথমবার কচ্ছপ জিতেছিলো, দ্বিতীয়বার খরগোশ জিতলো, কিন্তু তৃতীয়বার তারা দুইজনেই একসাথে জিতলো। দৌড় প্রতিযোগিতার পালা তো শেষ। এখন কী করবে?
কচ্ছপ খরগোশকে বলল, চল না ভাই বিশ্ব ভ্রমণ করে আসি। খরগোশ বলল, বেশ তাই চলো। তারপর একটা শুভ দিন দেখে তারা দু‘জনে বেরিয়ে পড়লো। কচ্ছপ যখন হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন সে খরগোশের পিঠে চড়ে বসে। খরগোশ বিদ্যুৎবেগে দৌড়ে পথ পাড় হয়। নদ-নদী এলে খরগোশ কচ্ছপের পিঠে উঠে বসে, কচ্ছপ সাঁতার কেটে তা পাড় হয়। এভাবে বহু পথ পেরিয়ে খরগোশ ও কচ্ছপ পৌঁছে গেলো ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজ মহলে। সাদা মর্মর পাথরের অতি সুন্দর তাজমহল দেখে তারা হতবাক হয়ে গেলো। এই তাজমহল ও ময়ূর সিংহাসন সম্রাট শাহজাহানের অমর কীর্তি। শোনা যায় ময়ূর সিংহাসনে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান হীরা কোহিনুর লাগানো ছিলো, পরে ইংরেজরা তা লুট করে নিয়ে যায়।
তাজমহল দেখার পর তারা কাশ্মীরের বরফাচ্ছাদিত পাহাড়, পর্বত পেরিয়ে চীনে ঢুকে পড়লো। তাদের এবারের গন্তব্য চীনের প্রাচীর। চীনের প্রাচীরের কাছে এসেতো খরগোশ আর কচ্ছপ অনেক অবাক হলো। মাইলের পর মাইল বিস্তৃত উঁচু প্রাচীর। আগের আমলের দুর্ধর্ষ মোঙ্গল জাতির আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য চীনের শক ও হান জাতি অনেক বছরের চেষ্টায় এই মহা প্রাচীর নির্মাণ করে। কচ্ছপ খরগোশকে পিঠে নিয়ে অনেক কষ্টে বেয়ে বেয়ে চীনের প্রাচীর পার হয়ে এগিয়ে চললো।
তারপর তারা ভিয়েতনামের এক সরাইখানায় কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে চললো রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ঐতিহাসিক ঘন্টাটি দেখতে। মস্কোর বিশাল ঘন্টাটির কাছে পৌঁছে কচ্ছপ ও খরগোশ খুব অবাক হলো। খরগোশ কয়েকবার লাফিয়ে লাফিয়ে ঘন্টাটি ছুঁতে চাইলো। কিন্তু ঘন্টাটি অনেক উঁচুতে থাকায় সে তা পারলো না। মস্কোতে তখন অনেক শীত, অনেক ঠান্ডা। তারা দুজনেই পার্কা নামের পশমের ভারি ও গরম জামা পড়ে লন্ডনের দিকে রওনা দিলো।
লন্ডনে পৌঁছে খরগোশ ও কচ্ছপ গেলো মাদাম তুসোর মোমের জাদুঘরে । সেখানে মোম দিয়ে তৈরি বিখ্যাত ও কুখ্যাত মানুষদের মূর্তি আছে। ওরা একে একে লেনিন, হিটলার, জর্জ ওয়াশিংটন, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখের অবিকল মূর্তিগুলো দেখে মেরিলিন মনরোর অপূর্ব সুন্দর মূর্তিটির কাছে এসে দাঁড়ালো। খরগোশের বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে এটা একটা মোমের তৈরি মূর্তি। খরগোশ হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে মেরিলিন মনরোর মূর্তিটা দেখতে লাগলো। চমৎকার এই মোম পুতুলের জাদুঘর দেখার পর তারা ফ্রান্সের প্যারিস শহরের দিকে রওনা দিলো।
প্যারিস হলো সারা পৃথিবীর শিল্প-সাহিত্যের রাজধানী। খরগোশ ও কচ্ছপ প্রথমে বিখ্যাত আইফেল টাওয়ারের একটা রেস্তোরাঁয় বসে দুপুরের লাঞ্চটা সেরে নিলো। তারপর ওরা গেলো লা ফাঁসিয়ে আর্ট গ্যালারিতে বিখ্যাত চিত্রকরদের আঁকা ছবিগুলো দেখতে। সেইসব আর্টের বিমূর্ততায় তারি রীতিমতো মুগ্ধ হলো।
এরপর তাড়া আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকা যেতে একটা বড়সড় জাহাজে উঠে বসলো। আমেরিকা পৌঁছে তারা গেলো আমেরিকার স্বাধীনতার প্রতীক স্ট্যাচু অভ লিবার্টি দেখতে। ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা লাভের পর এই মূর্তিটি ফ্রান্স ও আমেরিকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়। এই মূর্তিটি একটি ছিন্নবস্ত্রা নারীর । তার পায়ের কাছে ভাঙা শিকল আর হাতে ধরা একটি জ্বলন্ত মশাল। কচ্ছপ ধীর গতিতে বেয়ে বেয়ে মশালের মাথায় যেয়ে বসে রইলো।
তারপর তারা আরেকটি জাহাজে করে ফারাও রাজাদের দেশ মিশরে রওনা হলো। মিশর হলো পিড়ামিডের দেশ। তারা রাজা তুতেন খামেন ও রানি নেফারতিতির পিড়ামিড দেখে গেলো স্ফিংস দেবতার মূর্তির কাছে । এটির মুখটি মানুষের মতো দেখতে আর শরীরটা সিংহের। এতোসব দেখে ও বেড়িয়ে খরগোশ ও কচ্ছপ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো। তারা এবার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলো। অবশেষে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া থেকে চার্টার্ড বিমানে করে তারা দেশে ফিরে এসে তাদের প্রিয় সুন্দরবনের গহীন বনভূমিতে ফিরে গেলো। ফিরেই তারা গোলপাতা দিয়ে দুটি বিছানা বানিয়ে আরাম করে ঘুমিয়ে পড়লো।
কে জানে? তারা ভবিষ্যতে হয়তো আবারো নতুন নতুন দেশ দেখতে বিশ্ব ভ্রমণে বের হতে পারে।