করোনাকালীন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা গেছে, এই প্যাকেজের আকার হবে ১০ হাজার কোটি টাকার। কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের (সি. এম. এস. এমই) উদ্যোক্তাদের ৪ শতাংশ সুদে চলতি মূলধন দিতে নেয়া হয়েছে এই প্রণোদনা প্যাকেজ। বিদেশ থেকে দেশে ফেরা এবং শহর থেকে গ্রামে চলে যাওয়া নতুন উদ্যোক্তাদেরও দেয়া হবে এই ঋণ। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলির নানা ধরণের জটিলতা, জামানত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গ্রাহকের প্রদানে সীমাবদ্ধতা এসব কারণে ব্যাংক নির্ভরতা থেকে সরে এসে ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান (এস. এম. আই) বা বেসরকারি সং¯’াগুলির (এনজিও) মাধ্যমে ছোট ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এ সংক্রান্ত নীতিমালার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এই প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, নতুন প্যাকেজের আওতায় ঋণের সুদহার হবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, তবে এনজিওগুলো গ্রাহকদের ঋণ দেবে বার্ষিক ৪ শতাংশ সুদে, বাকি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি দেবে। ঋণগ্রহীতা ৬ মাসের প্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ টি কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের সুযোগ পাবেন। প্রত্যয়ন পত্র ছাড়াও দুজনের নিশ্চয়তাপত্রের (গ্যারান্টি) প্রয়োজন হবে।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এ ধরণের বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ তাদের করোনাকালীন বিরূপ পরি¯ি’তিতে সহায়তা দেবে। ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প একটি দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে সাহায্য করছে, কর্মসং¯’ান সৃষ্টিতে আমাদের এসএমই খাত বিশ্বে ৫ম এবং শিল্পসংখ্যার বিচারে বিশ্বের ৭ম। তদুপরি কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে এখন নারী উদ্যোক্তাও কম নয়, বিশেষ করে গ্রামীণ ও উপজেলা অর্থনীতিতে এই খাতটির বিশেষ ভূমিকাও রয়েছে যেখানে কর্মসং¯’ানে নারীদের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এই খাতটি সমৃদ্ধ করতে বিসিক শিল্পনগরীগুলির সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি।
বড় শিল্পোদ্যোক্তারা তাদের প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ অধিকাংশ পেয়েছেন। অপরদিকে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে অর্ধেক মাত্র ছাড় করা হয়েছে। কৃষকদের ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার পুরো বরাদ্দ বিতরণ করতে পারেনি ব্যাংকগুলি, অথচ ঋণ পরিশোধে কৃষকরাই এগিয়ে।
প্রথম পর্যায়ে করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার, এটি জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, করোনার সময় অর্থনীতি সচল ও মানুষের জীবিকার সং¯’ানে এই প্রণোদনা বিরাট ভূমিকা রেখেছে।
জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ; অর্থনীতিবিদরা আশংকা করেছেন, এই শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া না হলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ উদ্যোক্তা ঝরে পড়বেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের এই প্রণোদনা প্যাকেজ একেবারে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। দেশীয় বাজারের চাহিদা ও যোগান নির্ভর করে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের ওপর। দেশের ‘অভ্যন্তরীণ সাপ্লাই চেইন’ এর মূল চালিকা শক্তি এই খাত। এসডিজির লক্ষ্য অর্জন ও ২০৪১ সালের রূপকল্প অর্জনে এই খাতের ভূমিকা অপরিসীম।