‘ক্রেতার চাপ’ নেই

খাতুনগঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বছরের এই সময়টায় দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা থাকার কথা থাকলেও এবার যেন জমে উঠছেনা। বরং অন্যান্য বছরের তুলনায় বিক্রি কমেছে। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি দোকান বেড়ে যাওয়াতেই বিক্রিতে ভাটা পড়ছে বলে মনে করছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খাতুনগঞ্জে বছরের এই সময়ে ক্রেতাদের চাপ থাকে। এখানে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজারের উপরে পাইকারি দোকান।

অন্যান্যবারের মতো এবারো গুদামে ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, ডাল, ছোলা, চাল, মসলা, খেজুরসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। পাইকারি বাজারে প্রায় নিত্যপণ্যের দাম কমতির দিকে থাকলেও ক্রেতা সংকটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার চাপ নেই। ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। প্রায় সড়ক খালি, দেখা যায়নি ট্রাকের দীর্ঘসারি। আগে শ্রমিকরা বড় বড় ট্রাকে বিভিন্ন আড়তদারদের মালামাল লোড-আনলোড নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, কিন্তু এবারের চিত্র যেন ভিন্ন। মাঝে মাঝে কয়েকটি ঠেলাগাড়ি, রিকশা, ভ্যানে করে পণ্য লোড-আনলোডের কাজ করছেন শ্রমিকরা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর রমজান মাসে ৪২ হাজার টন তেল, ১ লাখ টন ছোলা ও ৩ লাখ টন চিনির চাহিদা থাকে। কিন্তু গত পাঁচ মাসে (নভেম্বর থেকে মার্চ) চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি অর্থাৎ ৫ লাখ ৪ হাজার টন তেল, ১ লাখ ৭১ হাজার টন ছোলা ও ১২ লাখ ২৫ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছে।

খাতুনগঞ্জ আড়তদার-ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন,অনান্যবারের তুলনায় এবার পর্যাপ্ত মালামাল মজুদ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা ছিলো এবার ক্রেতার চাপ বেশি থাকবে। কিন্তু এবার ক্রেতার চাপ নেই। ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। খাতুনগঞ্জের সেই চিরচেনা জৌলুস যেন আর দেখা যাচ্ছে না।

চাক্তাই ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান বলেন, প্রতিবছর এইসময় খাতুনগঞ্জের ব্যবসা জমে উঠতো। কিন্তু এবার তেমন ক্রেতা নেই। আজকে তো কোন পেঁয়াজও বিক্রি হয়নি। খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের দাম এবার তেমন বাড়েনি। কিন্তু ক্রেতাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। ফলে আমাদের বিক্রি কমে গেছে।

চাক্তাইয়ের আবুল বশর এন্ড সন্সের মালিক ব্যবসায়ী মো. আবুল বশর বলেন, অন্যান্য বছর খেজুর, ছোলাসহ পণ্য বিক্রিতে যে চাপ ছিল, এবার ক্রেতাদের সেই চাপ নেই। আর কয়েকদিন পর হয়তো আমাদের পণ্য আড়তে রাখতে হবে। তাছাড়া অনেক পণ্য রয়েছে পচনশীল। তা নিয়ে আমরা একটু চিন্তিত। এবারের মত খাতুনগঞ্জে ক্রেতাশুন্যের এমন চিত্র আর দেখা যায়নি। তবে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কিছুটা কমেছে। তাছাড়া আনাচে-কানাচে নানা পাইকারি দোকান বেড়ে যাওয়ায় খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছেন তারা।

খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক বাগদাদী করপোরেশনের মালিক মোজাম্মেল হক বলেন, চলতি মাসে গুদামে এক ট্রাক পেঁয়াজ তুলছি। এক ট্রাকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ বস্তা পেঁয়াজ থাকে। এখনো একশো বস্তা রয়ে গেছে। অথচ অনান্য বছর এ দিনে চার-পাঁচ ট্রাক পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিলো। অন্যবারের তুলনায় এবার বেচাকেনা অনেক কমেছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ক্রেতা না থাকায় আমাদের বেচাবিক্রিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে।