বেপরোয়া রোহিঙ্গারা
দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার
মিয়ানমার সামরিক সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। মানবিক দৃষ্টিকোণও থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে তৈরি হয়েছে নানামুখী সংকট। তার ওপর স্থানীয়দের অনেকেই হারিয়েছেন ঘর-বাড়ি ও কৃষি জমি। এসবের কারণে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় লোকজন দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এত কিছুর পরও রোহিঙ্গাদের সেদিকে কোনো আক্ষেপ নেই। প্রতিদিন তারা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে শিবিরের বাইরে গিয়ে চুরি-ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, মানবপাচার, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য পাচারসহ ইত্যাদি অপরাধ করে পুনরায় শিবিরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মাঝেমধ্যে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে প্রশাসন ধর-পাকড় করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তাদের দাবি রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পের বাইরে কোন প্রকারে যেতে না পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া। নির্দিষ্ট গণ্ডির ভিতরে যেন তাদের অবস্থান হয়। এজন্য বাড়াতে হবে কঠোর নজরদারি ও ধর-পাকড় অভিযান।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহমদ সনজুর মোরশেদ বলেন, রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে গতকাল সোমবার সকালে উখিয়া উপজেলার বেশ’কটি বাজারের আশপাশে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ১৩৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে ট্রানজিট ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়।
প্রশাসনের তাৎক্ষণিক অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সচেতন ও সুশীল মহল। তাদের প্রত্যাশা- জেলাজুড়ে এই অভিযান অব্যাহত থাকুক।
উখিয়া উপজেলার সদর রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত করে আবারও ক্যাম্পে ফিরে যায়। কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের পরও তারা তা মানছে না। যে কোন মূল্যে তাদের ক্যাম্প থেকে বের হওয়া বন্ধ করতে হবে। এমন কোন অপরাধ নেই যে, রোহিঙ্গারা করছে না। প্রশাসন যদি ঘন ঘন অভিযান পরিচালনা করে রোহিঙ্গাদের মনে ভীতি সৃষ্টি হবে। তখন অনেকেই ক্যাম্প থেকে বের হতে ভয় পাবে। এর ফলে এলাকায়ও নানা অপরাধ কমে আসবে।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে রোহিঙ্গাদের দিকে বিশেষ নজর রাখছি। বেশ ক’বার অভিযানও পরিচালনা করেছি। কোনভাবেই রোহিঙ্গাদের ছাড় নয়। তারা এত হিংস্র যা বলার মত নয়। কোন অপরাধকে তারা পাত্তা দেয় না। এমন কোন অপরাধ নেই যে তারা করছে না। আমরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করছি তাদের দমনের।