সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছয়জনের প্রাণ গেছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারসমর্থক সংগঠনের কর্মীদের সংঘর্ষের এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ।
এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে তিনজন এবং ঢাকায় দুইজন এবং রংপুরে একজন করে মারা গেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিজিবি নামানো হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকালে দেশের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল আন্দোলনকারীরা। তবে সকাল ১১টা থেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের খবর আসতে থাকে।
ঢাকার বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাতে নগরের বড় অংশজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে ভোগান্তিতে পড়েন চলতি পথের যাত্রীরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা বিলোপের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন আগেও হয়েছিল। এ ধরনের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সাপল এক পরিপত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল করে দিয়েছিলেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটা পদ্ধতি তুলে দেয় সরকার। ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, নবম গ্রেড এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে (১৪তম থেকে ২০তম গ্রেড) কোটাব্যবস্থা বহাল রাখা হয়।
এখন শিক্ষার্থীরা সব ধরনের কোটার বিলোপ দাবি করছে। তবে অনধিক পাঁচ শতাংশ কোটা রাখতে পারবে বলেও তারা উল্লেখ করেছে।
এই আন্দোলন এখন সহিংস হয়ে উঠছে। গতকাল একদিনেই পাঁচজন মারা গেছে। আর আহত হয়েছে শতাধিক, এদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
এ ক্ষেত্রে আমরা সরকারের কাছ থেকে আন্তরিক উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি। সে সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিও আবেদন জানাব, আন্দোলনকে যেন সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়া না হয়। কীভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি আদায় করা যায় সে চেষ্টা করতে হবে। সরকারকেও আলোচনার দরজা খোলা রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। সরকার সচেষ্ট হলে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পাবে না, সেটাও সরকারকে বুঝতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ