সুপ্রভাত ডেস্ক »
পর্নতারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের পরে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তাঁর মুখ বন্ধ রাখতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ছিল, টাকা দেওয়ার বিষয়টি গোপন রাখতে ট্রাম্প তাঁর ব্যবসায়িক সংস্থার নথিপত্রে জালিয়াতি করেছিলেন। তথ্য গোপনের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়িক নথিপত্রে জালিয়াতি করার দায়ে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আমেরিকার একটি আদালত।
বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের একটি আদালত এই রায় দিয়েছে। ওই মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগের সব ক’টিই প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ১২ সদস্যের জুরি। আগামী ১১ জুলাই ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করা হবে। আমেরিকার আইন অনুযায়ী, ট্রাম্পের জেল বা জরিমানা অথবা একসঙ্গে দু’টি সাজাই হতে পারে। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ব্যবসায়িক তথ্য গোপনের জন্য দোষী ৭৭ বছরের রিপাবলিকান নেতাকে শুধু জরিমানা করেই ছাড় দিতে পারে আদালত।
আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন সত্তরোর্ধ্ব ওই রিপাবলিকান পার্টির নেতা। এর পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, কে এই স্টর্মি? তাঁর সঙ্গে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের নাম জড়ানোর পর থেকেই পর্নতারকাকে নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই বিভিন্ন মহলে।
২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একাধিক মহিলার সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে। উঠে আসে একের পর এক নারীচরিত্রের নাম, যাঁদের সঙ্গে নাকি শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে সকলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম ছিল স্টর্মি।
সেই সময়ে দাবি করা হয়েছিল, ২০০৬ সাল নাগাদ স্টর্মির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ট্রাম্প। অভিযোগ ছিল, তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য সংস্থার নথি জালিয়াতি করে বহু টাকা ঘুষও দেওয়া হয়েছিল স্টর্মিকে। সেই অভিযোগেই ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেছে আমেরিকার একটি আদালত। যদিও স্টর্মির সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার কথা বরাবর অস্বীকারই করেছেন ট্রাম্প।
৪৪ বছর বয়সি স্টর্মির আসল নাম স্টেফানি গ্রেগরি ক্লিফোর্ড। তবে নীল ছবির দুনিয়াতে তিনি পরিচিত স্টর্মি নামেই।
স্টর্মির জন্ম লুইসিয়ানার ব্যাটন রুজে। যদিও বর্তমানে তিনি টেক্সাসের বাসিন্দা। স্টর্মির জন্মের চার বছরের মাথায় তাঁর বাবা-মা, শিলা এবং বিল গ্রেগরির বিচ্ছেদ হয়। মায়ের কাছেই মানুষ হন তিনি।
১৯৯৭ সালে ব্যাটন রুজের স্কটল্যান্ডভিল ম্যাগনেট হাই স্কুল থেকে স্নাতক হন স্টর্মি এবং সাংবাদিক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর ভাগ্যে অবশ্য অন্য কিছু লেখা ছিল।
১৭ বছর বয়সে পানশালায় স্ট্রিপার হিসাবে কাজ শুরু করেন স্টর্মি। কিছু দিনের মধ্যেই খ্যাতিও পান ওই পেশায়। আমেরিকার নামীদামি ক্লাব থেকে ডাক পেতে শুরু করেন। সেখানেই এক পর্ন পরিচালক তাঁকে ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ দেন।
পর্ন ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করার পর স্টর্মিকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি অসংখ্য পর্ন ছবিতে অভিনয় করেছেন। একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন। বেশ কিছু নীল ছবি পরিচালনার কাজও করেছেন পর্নতারকা।
বহু জটিলতাও রয়েছে স্টর্মির ব্যক্তিগত জীবনে। ২০০৩ সালে প্যাট মাইনকে বিয়ে করেন স্টর্মি। প্যাটের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০০৭ সালে তিনি মাইক মোজ়কে বিয়ে করেন।
মাইকের উপর গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে স্টর্মিকে ২০০৯ সালে গ্রেফতার করা হয়। এর পর ২০১৫ সালে ব্রেন্ডন মিলারকে বিয়ে করেন তিনি। সেই বিয়েও ভাঙে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে নিজেকে উভকামী বলে ঘোষণা করেন স্টর্মি। ২০২২ সালে তিনি পর্নতারকা ব্যারেট ব্লেডকে বিয়ে করেন। স্টর্মির এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে তাঁর সঙ্গে যৌনমিলন করেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, তার ঠিক এক বছর আগেই ট্রাম্প মেলানিয়াকে বিয়ে করেছিলেন।
২০০৬-এর জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার লেক তাহোতে একটি গল্ফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় বলে দাবি করেন স্টর্মি। তিনি জানান, ওই রাতেই ট্রাম্প তাঁকে হোটেলে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
২০১৮ সালে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে স্টর্মি দাবি করেন, সাক্ষাতের পর ট্রাম্প তাঁকে নিজের রিয়্যালিটি টিভি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’-এ অতিথি হিসাবে আসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরে ওই রাতেই দু’জনের সম্মতিতে তাঁদের মধ্যে যৌনমিলন হয়।
যৌনমিলনের আগে ট্রাম্প নাকি স্টর্মিকে বলেছিলেন, তাঁকে দেখে মেয়ে ইভাঙ্কার কথা মনে পড়ে ট্রাম্পের। একই দাবি জানিয়েছিলেন অন্য এক প্লেবয় মডেল ক্যারেন ম্যাকডোগালও। স্টর্মি এ-ও দাবি করেন, শারীরিক সম্পর্কের সময়ে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কোনও নিরোধ ব্যবহার করেননি।
স্টর্মি আরও দাবি করেছিলেন, প্রথম সাক্ষাতের পর বছরখানেক আর তাঁদের দেখা হয়নি। এর পর ২০০৭ সালের জুলাইয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের বেভারলি হিলসের একটি হোটেলে দেখা করেন তাঁরা।
স্টর্মির মতে, বেভারলি হিলসের হোটেলে আবার তাঁর সঙ্গে সঙ্গম করতে চান ট্রাম্প। কিন্তু তিনি ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হননি। সেই রাগেই নাকি তাঁর সঙ্গে রিয়্যালিটি শোয়ের চুক্তিও বাতিল করে দেন ট্রাম্প।
২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচার চালাচ্ছিলেন, তখন ট্রাম্প-স্টর্মি সম্পর্ক নয়া মোড় নেয়। স্টর্মি দাবি করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাঁকে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি মুখ বন্ধ না রাখলে তাঁকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ট্রাম্প সে কথা অস্বীকার করলেও তাঁর অস্বস্তি বাড়িয়ে দেন তাঁরই দীর্ঘ দিনের আইনজীবী মাইকেল কোহেন। কোহেন দাবি করেন, ট্রাম্পের কথায় স্টর্মিকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি।
তবে ট্রাম্প প্রথম নন, এর আগেও এক রিপাবলিকান নেতাকে ফ্যাসাদে ফেলেছিলেন স্টর্মি। ২০১০ সালে লুইসিয়ানার সেনেট পদের জন্য রিপাবলিকান নেতা ডেভিড ভিটারের বিরুদ্ধে দাঁড়ান তিনি।
সেই সময় ডেভিডের একটি ফোনের বার্তালাপ প্রকাশ্যে আসে, যেখানে তাঁকে এসকর্ট পরিষেবা চেয়ে কথা বলতে শোনা যায়। মনে করা হয়, এই কথোপকথন ফাঁস করার নেপথ্যে হাত ছিল স্টর্মির। যদিও শেষ পর্যন্ত ভোটে জিতে সেনেট হয়েছিলেন ডেভিডই।