নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় সম্প্রতি বদলিকৃত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দাখিলকৃত অভিযোগে এসব তথ্য জানা গেছে। এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর নিদের্শে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বদলি হয়ে যাওয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাজুল ইসলাম কুতুবদিয়া যোগদানের পর থেকে কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে জিম্মি করে হয়রানিসহ নিয়ম বহির্ভূত কাজ করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। উক্ত কর্মকর্তা চলতি বছরে নতুন নিয়োগকৃত সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে চাকরিতে যোগদান ও তাদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে প্রতি শিক্ষকদের কাছ হতে চার হাজার টাকা করে আদায় করেন। প্রত্যেক বিদ্যালয়ের জন্য বিজয় ফুল ও আন্তঃক্রীড়া বাবদ চার হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ আসলে তিনি সংশ্লিষ্ট অফিস খরচ বাবদ প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে অষ্টাশি হাজার টাকা কমিশন কেটে নেন। শিক্ষক বদলির সরকারি নীতিমালা তোয়াক্কা না করে ভুয়া কাগজ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উপজেলা বদলি কার্যক্রম চালান।
চলতি সালে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে মর্মে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের জনৈক ইট ভাটার মালিক সামসুল আলাম কুতুবীর কাছ হতে এক লক্ষ টাকা ঘুষ নেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা বাবদ বরাদ্দ আসলে উক্ত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ছয় শত টাকা হারে ঘুষ নেন। তার এ সমস্ত দুর্নীতির কাজে সহযোগিতা করেন ফরিদুল আলম নামের এক শিক্ষক নেতা। তার মাধ্যমে উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষকদের কাছ থেকে হুমকি ধমকি দিয়ে টাকা আদায় করেন। অভিযুক্ত ফরিদুল আলম একজন সহকারী শিক্ষক হয়ে দীর্ঘ দশ বৎসর যাবৎ কুতুবদিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। কোন প্রধান শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে বদলি হতে চাইলে তাদের উপর বাধাসহ প্রভাব বিস্তার করা হয় বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষার চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক সোলতান মিয়া কুতুবদিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরজমিনে পরিদর্শনে গেলে বিদ্যালয়ের বার্ষিক রিপোর্টসহ সার্বিক বিষয় দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদায়নের নির্দেশ প্রদান করলেও অদ্যাবধি উক্ত শিক্ষকের সাথে যোগসাজশের কারণে কোন প্রধান শিক্ষক পদায়ন হয়নি।
ইতোমধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবরে অভিযোগ দাখিল করলে মন্ত্রী চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালককে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে উপপরিচালক শহিদুল ইসলামের নির্দেশে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসে তদন্ত কমিটি সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
উক্ত দুর্নীতির বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলামের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান। তিনি আরও বলেন, এসব আমার রিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর উক্ত কমকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে।