সুপ্রভাত ডেস্ক »
সরকারের আনুকূল্যে বেড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ সৃষ্টির জন্যই বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম প্রস্তাবিত (২০২৪-২৫ অর্থবছর) বাজেটের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেছেন।
দলের চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে রোববার (৯ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত (২০২৪-২৫ অর্থবছর) বাজেটের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই বাজেট কালো টাকা সাদা করার বাজেট। কালো টাকায় ঢালাও দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। সরকারের কোন সংস্থাই কালো টাকা সাদাকারীদের কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। অর্থাৎ দায়মুক্তি বা আইনি ছাড় দেয়া হয়েছে। এর ফলে সৎ ও বৈধ আয়ের করদাতাদের নিরুৎসাহিত ও দুর্নীতিকে সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হলো
বাজেট অলিগার্কদের জন্য
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ বাজেট দেশের গুটিকয়েক অলিগার্কদের জন্য, যারা শুধু চুরিই করছে না- তারা ব্যবসা করছে, তারাই পলিসি প্রণয়ন করছে, আবার তারাই পুরো দেশ চালাচ্ছে।
দেশ আজ দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। এই বাজেট কল্পনার এক ফানুস। এই বাজেট ফোকলা অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে। বাজেট প্রণয়নের জন্য যে সম্পদ প্রয়োজন সেটাই এ অলিগার্করা লুট করে নিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ব্যাংকগুলো খালি। সরকারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে অলিগার্করা ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে শূন্য করে দিয়েছে। এ অর্থের সিংহভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে নজিরবিহীন হাহাকার তৈরি হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি ও খেলাপি ঋণ
বিএনপি মহাসচিব তার লিখিত বক্তৃতায় বলেন বাজারে চরম মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও এখন বিলাসী পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সবকিছুর দামেই আগুন লেগেছে। মানুষের কেনার ক্ষমতা নেই। মানুষ সঞ্চয় ভেঙ্গে খাচ্ছে। অনেকের সঞ্চয়ও নেই। মাছ, মাংস, ডিম অর্থাৎ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য কেনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মানুষ আর এ বোঝা টানতে পারছে না।
তার অভিযোগ সরকারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে খেলাপি ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা।
তার দাবি, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিই আজ ঋণময়। মেগা প্রকল্পের অর্থনৈতিক ফিজিবিলিটিহীন এসব ঋণ সমগ্র অর্থনীতিকে দেশী-বিদেশী অলিগার্কদের কাছে জিম্মি করে ফেলেছে।
ডলার ও রিজার্ভ সংকট
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ তের বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে গেছে এবং ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে পারছে না। মার্কিন কোম্পানিসহ বেশ কিছু বিদেশী কোম্পানি ও এয়ারলাইন্সের বকেয়া শোধ করা যাচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন,ধারাবাহিকভাবে ডলার রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছে। দুঃখজনক হলো রিজার্ভ সংকট কাটিয়ে ওঠার কোন রোডম্যাপই এই বাজেটে দেয়া হয়নি। অথচ রিজার্ভ ও ডলার সংকট অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সংকট। অর্থ পাচার ও হুন্ডি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে ডলার বাজার বাগে আনার চেষ্টা বৃথা যেতে বাধ্য।
তার অভিযোগ গত পনের বছরে ছয় বছরের সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে এবং পাচারের সঙ্গে জড়িতরা সিংহভাগই সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ।