১ আগস্ট থেকে সংস্কারের জন্য কালুরঘাট সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধের প্রথমদিনেই মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে মানুষকে। যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে দু’টি ফেরি চালু করার কথা থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার চলেছে মাত্র একটি ফেরি। তার ওপর জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়া পল্টুন পাড়ি দিয়েই লোকজনকে উঠতে হচ্ছে তীরে। আর নদীর দুই তীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে শত শত যানবাহনকে। ফলে দুই তীরেই কয়েক কিলোমিটার সড়ক জুড়ে ছিল তীব্র যানজট।
সংস্কারের জন্য তিন মাস অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে কালুরঘাট রেলসেতু। মঙ্গলবার সকালে সেতুর দুইপাশে ব্যারিকেড বসিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যানুযায়ী, পর্যটন শহর কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষের ‘মাথাব্যথা’ প্রায় শতবর্ষী জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু। সেতুর অবস্থা এমন, এর ওপর দিয়ে কক্সবাজারগামী ভারী ইঞ্জিনের ট্রেন নেওয়া অসম্ভব। তাই কালুরঘাট সেতু সংস্কার করতে হচ্ছে। বর্তমানে এই সেতুতে ট্রেনের গতি ১০ কিলোমিটার। সংস্কারের পর ৫০-৬০ কিলোমিটার হবে।
বোয়ালখালী উপজেলা ও পটিয়ার একাংশের কয়েক লাখ মানুষকে যাতায়াতের জন্য নির্ভর করতে হয় কালুরঘাট সেতুর ওপর। মঙ্গলবার সকাল থেকে সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে এ দুই উপজেলার লাখো মানুষ। ঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে না পারা মানুষের পাশাপাশি রোগীদের দুর্ভোগের চিত্রও দেখা গেছে সেতু এলাকায়।
কালুরঘাটে একটি নতুন সেতুর দাবি আজকের নয়। গত প্রায় তিন দশক ধরে বোয়ালখালী ও পটিয়ার মানুষ একটি নতুন সেতুর দাবি করে আসছিল। প্রায় শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুর কারণে এ দুই উপজেলার কয়েকলাখ মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর। এই দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে নির্বাচিত হওয়া দুই সংসদ সদস্য ইতিমধ্যে পরলোকগমন করেছেন। কয়েকমাস আগে নতুন একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন সংসদ সদস্যের আর কিছু করার না থাকলেও আগের দুই সংসদ সদস্য নতুন সেতু নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছেন।
যখন কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হলো তখন এলাকাবাসী মনে করেছিল তাদের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তির বুঝি অবসান হতে চলল। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটল না। অজ্ঞাত কোনো কারণে রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হলেও এই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাই গৃহীত হলো না। সেখানে বাধা কী বা কারা সেটিও জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। এখন নতুন এই রেলপথ চালু হলে তার মসৃণ গতিপথে জোড়াতালি দেওয়া কালুরঘাট সেতু একটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। দুর্ভাগ্য হলো এই যে, এই সমস্যা খুব সহসা মিটে যাবে তারও কোনো উপায় নেই, কারণ যে সেতু নির্মাণে এখনো স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা প্রণয়নই করা হয়নি সে সেতু নির্মাণ কবে হবে তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। কাজেই বিকল্প যে যোগাযোগ ব্যবস্থা করা হয়েছে তা কতটা কম ভোগান্তিতে করা যায় সে চেষ্টা করা উচিত কর্তৃপক্ষকে।