সোমবার প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) চট্টগ্রামের নদীগুলোর দখল ও দূষণ রোধে একটি গণশুনানির আয়োজন করে। সেখানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নদী রক্ষায় কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয় না। তারা ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে দায়িত্ব শেষ করে। নদীটি শিল্পদূষণের শিকার। নদীর সঙ্গে সংযুক্ত কারখানাগুলোর ৯০ শতাংশের বর্জ্য শোধনাগার নেই। নগরের দুই হাজার টন বর্জ্য গিয়ে পড়ে নদীটিতে।’
অনুষ্ঠানে হালদাপাড়ের বাসিন্দা মুজিবুল হক বলেন, ‘হালদার সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন খালে স্স্নুইসগেট (জলকপাট) দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই স্স্নুইসগেট কোনো কাজে আসছে না। এগুলো তুলে দিলে নদী এবং এলাকার খালগুলো বাঁচবে। তিনি আরও বলেন, ‘হালদা নদীকে ন্যাশনাল হ্যারিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই নদীটি আমরা কিছুটা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছি। তবে এই নদীর উজানে এখনো তামাক চাষ হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর উপজেলার বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে পলিথিন, প্লাষ্টিকসহ দূষিত বর্জ্য পানি কৃষি জমি হয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে ১৬১ কিলোমিটারের সর্পিলাকার কর্ণফুলী নদী। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশা রয়েছে।
কেননা, কর্ণফুলীর বিভিন্ন কারখানার মধ্যে দু’একটি ইটিপি (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) স্থাপন হলেও অধিকাংশ কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ অপসারণের জন্য নিজস্ব কোন প্লান্টেশন নেই। ফলে, এসব বর্জ্য ছোটখাটো খাল ও ড্রেন দিয়ে প্রবেশ করছে নদীতে। ফলে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি দুষিত হচ্ছে নদীর পরিবেশ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বর্জ্য আর হাওরের পানি একাকার হয়ে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
কর্ণফুলী রক্ষার দাবিটি অনেক পুরোনো। কিন্তু সুরাহা করার কেউ নেই। শুনেছি এতদিন রাজনৈতিক প্রভাশালীদের কারণে দখল-দূষণমুক্ত করা যায়নি। কিন্তু এখন তো সেরূপ চাপ থাকার কথা নয়। এখনও তাহলে কাজটা শুরু হচ্ছে না কেন? নদীটিকি তাহলে বিলীন হয়ে যাবে? এর ভবিষ্যৎ কি এখনো অন্ধকারে?