বেঁচে থাকা হুমকির মুখে
নিজস্ব প্রতিনিধি, কর্ণফুলী
সাম্পানমাঝিরা কর্ণফুলী নদীর প্রাণ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একচোখা সিদ্ধান্তে বলি হতে চলেছে বংশ পরম্পরায় চলে আসা এ পেশায় জীবনধারণকারী মানুষগুলো। করোনার কারণে সাম্পানমাঝিরা এমনিতেই জীবিকা সংকটে। তার ওপর নিজেদের ঘাট হারিয়ে এখন মানবেতর পর্যায়ে পৌঁছেছে ওরা। সাম্পান বাওয়া তাদের বাপ-দাদার পেশা।
২০০৩ সালের পাটনীজীবী নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে মাঝিদের ঘাটছাড়া করেছে চসিক। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। তাই প্রতিবাদে নেমেছে মাঝিরা। দিনব্যাপী অনশন করতে হচ্ছে তাদের। এমনিতেই তাদের অনেকে পেশাটি ছেড়ে দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে কর্ণফুলীর সাম্পান চিরতরে হারিয়ে যাবে। এমনটাই বললেন আন্দোলনের আহবায়ক কর্ণফুলী নদী সাম্পানমাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এসএম পেয়ার আলী।
স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ সত্ত্বেও সাম্পানমাঝিদের ঘাট ইজারা না দেবার প্রতিবাদে নিজেদের সাম্পান নিয়ে গতকাল ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট ও ফেরিঘাটে অনশন পালন করে ৮ সংগঠনের তিনশ মাঝি। এতে দুর্ভোগে পড়ে নদীর দু’পাড়ের যাত্রীরা।
এসএম পেয়ার আলী জানান, গত পহেলা বৈশাখ সাম্পানমাঝিদের কাছ থেকে ঘাট কেড়ে নিয়ে পাটনীজীবী (সাম্পানমাঝি) নীতিমালা লঙ্ঘন করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ইজারা দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম। পরে ঘাটহারা মাঝিরা এ অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করে।
অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রশাসন-২ শাখা থেকে পাঠানো চিঠিতে পেশাদার ও জন্মগত পাটনীজীবী সমিতিকে ঘাট ফিরিয়ে দিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দীন ঘাটমাঝিদের কাছে ঘাট ইজারা দেবার অনুরোধ জানালেও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এ বিষয়ে পুনরায় আইনি মতামতের জন্য নির্দেশনাটি চসিক আইন কর্মকর্তার কাছে পাঠান। এভাবে গত ছয় মাসেও মাঝিদের কাছে ঘাট ফিরিয়ে দেয়নি চসিক। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন যদি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে মাঝিদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে চসিক কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলনে যাবার কথা বলেন এসএম পেয়ার আলী।
আন্দোলনের সহযাত্রী চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি গবেষণাকেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান বলেন, চসিক মাঝিদের কাছ থেকে ঘাট ছিনিয়ে নিয়ে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির পরিপন্থি কাজ করছে। কিছুতেই যা মেনে নেয়া যায় না।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম বলেন, সরকারি নীতিমালা মেনে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব ঘাট ইজারা দেয়া হয়েছে।