আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস
ভূঁইয়া নজরুল :
চট্টগ্রাম মহানগরীর বাতাসে একসময় যে ধুলোকণা ভেসে বেড়াতো এখন আর তা দেখা যায় না, নির্মল বায়ু। কর্ণফুলী নদীর পানিতে আগে যে মাত্রায় দূষণ ছিল এখন আর তা নেই। অর্থাৎ, বাতাসে ও পানিতে এখন দূষণমুক্ত অবস্থা। আর তাহলো করোনার সুবাতাস। এই সুবাতাস যতো দীর্ঘায়িত হবে পরিবেশের জন্য ততোই মঙ্গল। তবে করোনার অবসান হওয়ার সাথে সাথে আবারও শুরু হবে পরিবেশের উপর বিধ্বংসী কার্যক্রম। এমনটাই আশঙ্কা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের।
করোনা ও লকডাউনের কারণে ঢাকার বাতাসের পরিস্থিতি খুব ভাল হয়ে গিয়েছিল তবে গত কিছুদিন গাড়ি চলার কারণে আবারো বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে বলে উলেস্নখ করে ২০০৮ সালে জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন অব আর্থ পুরস্কার পাওয়া বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্স স্টাডিজ নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্নধার ড. এ আতিক রহমান। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রভাতকে বলেন, ‘করোনা যুগ চলে যাওয়ার পর পরিবেশের দূষণ আবারোও শুরু হবে । মহানগরগুলোতে সবচেয়ে বেশি দূষণ ঘটায় আশপাশের ইটভাটা এবং নির্মাণ কার্যক্রম থেকে নির্গত ধোঁয়ার কারণে। এখন এগুলো বন্ধ রয়েছে এবং করোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা আবারো শুরু হবে। এজন্য মানুষকে সচেতন হবে। সচেতনতা ছাড়া পরিবেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কম দেখা যাচ্ছে। এতে পরিবেশ রিফর্ম হচ্ছে। কক্সবাজারে এখন ডলফিন দেখা যাচ্ছে, পাখিগুলোর বিচরণ চোখে পড়ছে। এটা অবশ্যই পরিবেশের জন্য ভাল বার্তা, কিন’ রক্ষায় আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
ড. আতিক রহমান যে আশঙ্কা করেছেন সেই আশঙ্কার সাথে একমত পোষণ করে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী বলেন,‘লকডাউন পরিসি’তিতে কর্ণফুলীতে দূষণের মাত্রা অনেক কমে গিয়েছিল। নগরীর ভেতর থেকে খালগুলো থেকে প্রচুর দূষিত পানি কর্ণফুলীতে মিশ্রিত হতো, কিন’ অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় রাসায়নিক দূষণ কমে গিয়েছিল। একইসাথে চট্টগ্রামের বাতাসেও দূষণের মাত্রা কমে গেছে। কিন’ করোনার পর তো আবারো তা বাড়বে। আবার কোথাও কোথাও এই করোনাকালেও চলছে পাহাড় কাটা।‘
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের কথার সত্যতা পাওয়া যায় এই পাহাড় কাটার। নগরীর এসএস খালেদ রোডে রিমা কনভেনশন সেন্টারের বিপরীত পাশের পাহাড় কাটার কাজ চলেছে করোনার মধ্যে। এছাড়া খুলশি ও বায়েজীদ থানাধীন এলাকায়ও চলেছে পাহাড় কাটা। এখন ডিটি বায়েজীদ সংযোগ সড়কের উভয় পাশের পাহাড়গুলো বিভিন্ন সময়ে কাটা হচ্ছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান। এধরনের পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম যতোদিন চলবে পরিবেশ কখনো সঠিক রূপে ফিরতে পারবে না বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. গাজী আসমত। তিনি বলেন,‘ করোনাকাল শেষে মানুষ আরো প্রবল শক্তিতে উন্নয়ন কার্যক্রম চালাবে এবং পরিবেশের ক্ষতি সাধনে এগিয়ে আসবে। মধ্যবর্তী সময়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চলবে তাদের কার্যক্রম।‘
তবে লকডাউন ও করোনার সুফল হাতেনাতে পাওয়া গেছে হালদা নদীর ড়্গেত্রে। পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননড়্গেত্র এই নদীতে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি মাছের ডিম আহরিত হয়েছে বলে উলেস্নখ করে হালদা গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় কর্নফুলী ও হালদা দূষণমুক্ত ছিল এবং এর প্রভাবে হালদায় ডিমের পরিমাণ বেড়েছে। তবে একদিকে যেমন পরিবেশের উন্নয়ন হয়েছে অপরদিকে মানুষ প্রাণিহত্যাও বাড়িয়ে দিয়েছে। কক্সবাজারে যেমন ডলফিন হত্যা, দেশের কোথাও বন্যপ্রাণি হত্যাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বেড়ে গেছে। এসব কার্যক্রমগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন,‘ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়গুলোকে রক্ষার জন্য হালদার ডলফিন রক্ষার মতো কিছু রিট প্রয়োজন। অন্যথায় পরিবেশের একার পক্ষে পাহাড়গুলোকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন পাহাড় ও পরিবেশ রক্ষায়।’
এদিকে আজ শুক্রবার (৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জাতিসংঘ ঘোষিত এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়- প্রকৃতির জন্য সময় ( টাইম ফর নেচার)। করোনাকালের কারণে এবার দেশে দিবসটি সরকারিভাবে এখনই পালিত হচ্ছে না। তবে পরবর্তীতে তা পালিত হবে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান।