নিজস্ব প্রতিবেদক :
ছাপাখানার ভ্যানের কুলি আবু তাহের। গতবছর এসময়ে তার দৈনিক আয় ছিল ৮ শত থেকে ১ হাজার টাকা, এখন তার আয় কমে হয়েছে ৩শ থেকে ৪শ টাকা। বছরের এসময়ে কাজের চাপে কথা বলার ফুরসত ছিল না অথচ এখন দৈনিক ৩টা থেকে ৫টা অর্ডার নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। কথাগুলো বলছিলেন আন্দরকিল্লা নিউ আল মক্কা অফসেট প্রেসের মালিক মোহাম্মদ শাহাদাত।
বসে থাকার এ চিত্র শুধু আল মক্কা প্রেসের নয়, নগরীর প্রায় ৩০০ প্রেসে একইচিত্র। রোববার নগরীর আন্দরকিল্লা, মোমিন রোড, সিরাজদ্দৌল্লা রোড ও চন্দনপুরায় অবস্থিত প্রেসে সরেজমিনে ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া যায়।
প্রেস মালিক ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত কাজের চাপে একটু বসারও সময় পাওয়া যেত না অথচ এ বছর করোনার কারণে ডিসেম্বর মাসেও কাজ নেই। প্রেস বাজার গলির প্যারামাউন্ট প্রিন্টিং প্রেসের মতো অনেক দেখা যায় কাজের অর্ডার না থাকাতে প্রেস বন্ধ করে কর্মচারীদের অলস সময় কাটাতে। এছাড়া ছাপার কাগজ ও মালামাল পরিবহনের কাজ না থাকাতে বসে সময় কাটাচ্ছে বেশির ভাগ কুলি।
নতুন বছরের কালেন্ডার ও ডায়েরি ছাপার অবস্থা জানতে চাইলে আজাদ প্রোডাক্টসের চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চের ম্যানেজার ডেরেন রড্রিস জানান, প্রতিবছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন বছরের কালেন্ডার ও ডায়েরি ছাপার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে হয় অথচ করোনার কারণে ৪ মাস প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরেও এখনো কাজের তেমন অর্ডার নেই বললে চলে।
নগরে বিয়ের কার্ড ছাপানোর প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল প্রোডাক্টস। আইডিয়ালের কর্মচারীদের সাথে কথা বলে যায়, করোনার আগে যেখানে তাদের দৈনিক আয় ছিল প্রায় ৬০ হাজারের মতো বর্তমানে তা নেমে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। আগে যারা ৫শ কপি কার্ড ছাপার অর্ডার করতো বর্তমানে তা ৩০ থেকে ৫০ কপি।
প্রেসের ছাপার কাজ সম্পর্কে প্রেস অপারেটর আব্দুল হামিদ বলেন, বর্তমানে ছাপার কাজ গত বছরের তুলনায় অনেক কম। আগে এ সময়ে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করেও কাজ শেষ হতো না আর এখন কাজ না থাকাতে সন্ধ্যা ৬টার আগে দোকান বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।
ছাপার কাগজের অর্ডার না থাকাতে অলসভাবে সময় কাটাচ্ছে কাগজের দোকানদাররা, তাদের একজন শরীফ পেপার এর মালিক মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রেস চললে কাগজ চলবে, প্রেস চলে না তাই কাগজও বিক্রি হচ্ছে না। দোকানে সকাল থেকে অলসভাবে বসে আছি এখনো কোন গ্রাহকের দেখা নেই।
রাজাপুকুর লেইনের জি এ ভবনের সামনে ভ্যানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন কুলি আবু তাহের, আব্দুল গুফরান, মো. হাফেজ। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর এ সময়ে মালামাল পরিবহনে ব্যস্ত থাকতে হতো আর এ বছর ছাপার কাজ না থাকাতে অলসভাবে বসে থাকতে হচ্ছে।
তাদের একজন আবু তাহের জানায়, এ সময়ে আমরা দৈনিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করতাম আর এখন কোন দিনে ৩০০ টাকা আবার কোন দিনে ৪০০টাকা। গত কয়েক মাসে এমন দিন গেছে ১০০ টাকার কাজও পাইনি। প্রেসে কাজ নাই তাই মালামাল পরিবহনের কাজ নাই।
প্রেসের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রেস মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ সভাপতি ও দ্য অ্যাড কমিউনিকেশনের মালিক দিপক কুমার দত্ত বলেন, করোনায় প্রেস ব্যবসার অবস্থা খুবই নাজুক। আগে একটা প্রেসে মাসে ১০ লাখ টাকার আয় হলে বর্তমানে তা ২ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। করোনার কারণে কালেন্ডার, ডায়েরি থেকে শুরু করে স্কুল-কিন্ডার গার্ডেনের বই, খাতা সব কিছুর অর্ডার বিগত বছরের ১০ শতাংশেরও কম। এছাড়া ছাপার অর্ডার না থাকাতে সবগুলো প্রেসে কম-বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। বলতে গেলে করোনায় প্রেস ব্যবসায় ধস নেমে গেছে।
এ মুহূর্তের সংবাদ