মো. মহসীন »
মহামারি প্রতিকূলতা বর্তমানে জাতীয় জীবনে বড় এক দুর্যোগময় পরিস্থিতির অবতারণা করছে, এই পরিস্থিতি আদৌ জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে দিবে কিনা তা বলা এই মুহূর্তে কারো পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় না। করোনা ২য় ধাপের সংক্রমণের ব্যাপকতা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, করোনার ডেল্টা নামের এই ধরনটি গত কয়েক মাসে ভারতে অত্যধিক তা-ব চালিয়েছে, সেখানে অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইদানীং ভাষ্য মতে করোনার ডেল্টা ধরনটি সারা বিশ্বের জন্য বড় এক উদ্বেগ। দেশেও বর্তমানে বহু জেলায় এই ডেল্টা ধরনটির সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে, বিবিধ কারণবশত দেশে সাময়িক সময়ের জন্য টিকার একটু ঘাটতি দেখা দেয়ায় জনজীবনে কিছুটা ভীতির সঞ্চার হয়েছে। তবে এরই মধ্যে চীন থেকে সিনোফার্মার ১১ লাখ ডোজ টিকা আসতে শুরু করেছে, পরবর্তীতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো টিকা পর্যায়ক্রমে দেশে এসে পৌঁছাবে। সংক্রমণ রোধে দেশের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মানা এবং এরই সাথে টিকা নেয়ার সর্বাত্মক মানসিক প্রস্তুতি থাকার অবশ্য প্রয়োজন রয়েছে। কেননা দেশের সর্বত্র টিকা প্রদানের কার্যক্রম শুরু হলে, সেক্ষেত্রে সংক্রমণ অনেকাংশে কমে আসতে পারে। এছাড়া দেশের গবেষক মহল এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আর কোন বিকল্প দেখছেন না এই মুহূর্তে।
করোনার ডেল্টা ধরনটি নিয়ে দেশের বিজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞানী আর গবেষকরা প্রত্যেকে বিশেষ শঙ্কা প্রকাশ করছেন। কেননা গত বছর করোনার যে ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো,তা এখন মোটামুটি নিষ্প্রভ। কিন্তু এ বছরের ২য় মাস থেকে দেশে বিভিন্ন দেশের করোনার নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হচ্ছে। যেগুলো দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে পারে। সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে তখন আইসিইউ বেডের চাহিদা অনেকাংশে বাড়তে পারে এবং অক্সিজেনের প্রয়োজনটা তখন অতীব মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, আফ্রিকা ও ব্রাজিল,নাইজেরিয়া এবং ভারত থেকে আসা ব্যাক্তিদের সংস্পর্শে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ডেল্টা ধরনটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রবাসীদের সংস্পর্শে থাকা ব্যাক্তিদের কারণে এই মারাত্মক করোনা ভ্যারিয়েন্টগুলো দ্রুত দেশের বিভিন্ন কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ মর্মে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। এখনও দেশের অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরছে না,স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলছে। করোনার ডেল্টা ধরনটি অনেক বেশি ব্যক্তিকে দ্রুত সময়ে সংক্রমিত করতে পারে। করোনা নিয়ে হেলাফেলা করাটা জীবনে বড় দুর্যোগের কারণ বা সারা বছরের কান্না হতে পারে। এই ভাইরাসের সময় সময় রূপ পাল্টানো এবং বিবিধ ধরন নিয়ে গবেষকরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই এক্ষেত্রে ভ্যাকসিনই সাময়িক সুরক্ষা দিতে পারে, তাও গবেষকরা ভ্যাকসিন নিয়ে নিশ্চিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এখন চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি এবং শুধু ট্রায়াল ভিত্তিক টিকা প্রদান করা হচ্ছে। বিশ্বের বেশ কিছু কোম্পানির টিকা মানব শরীরে ভালো কার্যকরী হচ্ছে। ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ অন্তত দীর্ঘ সময়কাল সুরক্ষা দিতে পারে, এরপরও সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও তাগিদ রয়েছে । সারা বিশ্ব এখন করোনার ডেল্টা ধরনটি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্নতায় জীবন পাড় করতে হচ্ছে । সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিরাজিত করোনা ভাইরাসজনিত বিবিধ প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়েও মানুষ উদ্বেগময় জীবন অতিবাহিত করছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষাজীবনে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই মহামারি প্রতিকূলতার অবসান ঘটিয়ে মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটা মনে হয় এক বড় চ্যালেঞ্জ। সর্বোপরি দেশে টিকা প্রদান অব্যাহত রাখা গেলেই দেশ করোনা মোকাবিলায় অবশ্য সক্ষম হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক