দেশব্যাপী করোনার আঘাত তীব্র হতে শুরু করেছে। নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি, মৃত্যু অধিক হওয়ায় এবং সীমান্তবর্তী ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি দেশব্যাপী শঙ্কা তৈরি করেছে। গত বুধবার শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৭শ ২৭ জন এর আগের দিন ৪ হাজার ৮৪৬ জন। গত কয়েকদিনে মৃত্যু ৭৫ থেকে ৮৫’র মধ্যে। বুধবার মৃত্যু ৮৫, এর মধ্যে খুলনা বিভাগেই ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে খুলনা বিভাগে শনাক্ত ৫০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪২ শতাংশ আর ময়মনসিংহ বিভাগে ৬১.৯ ভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, স্বাস্থ্যবিধি এবং বিধিনিষেধ মেনে চলার ব্যাপারে সতর্ক না হলে আগামী দিনগুলোতে করোনা পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে উঠতে পারে।
চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির আশঙ্কায় ৩০ জুন পর্যন্ত রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ রাখা, সকল ধরণের সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। সরকারিÑ বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি বেড়েছে। প্রবীণ এবং জটিল রোগীদের আইসিইউ’র প্রয়োজন বেশি। সেই সাথে জেলা উপজেলার হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত থাকা চাই। চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালের ১৬ এবং চমেক হাসপাতালের ১০টির আইসিইউ শয্যা একটিও খালি নেই। আইসিইউ শয্যা অবিলম্বে বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা যথাযথ মানা হচ্ছেনা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহলের সচেতনতা প্রয়োজন। হোটেলÑ রেস্তোরাঁ এবং পরিবহন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে তদারকি প্রয়োজন।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি ও বিধিনিষেধ যথাযথ প্রতিপালন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি ও টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখাই সর্বোত্তম উপায়। বর্তমানে টিকা দেওয়া শুরু হলেও তা প্রয়োজনের নিরিখে একেবারেই অপ্রতুল। রাশিয়া ও চীনের টিকা পেতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট যাতে চুক্তি মোতাবেক টিকা দেয়, সে ব্যাপারে তাগাদা দিতে হবে। দেশ যাতে টিকা উৎপাদন করতে পারে সেজন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। টিকা নিয়ে কিছু দেশ বাণিজ্য ও কূটনীতি করছে, মহামারিতে মানুষ ও মানবসভ্যতা বাঁচাতে যেখানে ঐক্যবদ্ধ মানবিক প্রচেষ্টা প্রযোজন সেখানে কিছু উন্নত দেশের টিকা সরবরাহে ‘ধীরে চলো’ দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থনযোগ্য নয়। টিকা ক্রয়ে এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ৯৪ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলেছে, ৫০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে ব্যক্তিদের টিকার আওতায় আনতে হবে। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও সমাবেশ এড়িয়ে চলার কোনো বিকল্প নেই এ মুহূর্তে।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে কেবল বিধিনিষেধ জারি করা নয়, কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রতিরোধে জনগণকে সম্পৃক্ত করা এ জন্য কমিউনিটি কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এসব কাজে রাজনৈতিক দল, এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলির সাহায্য নিলে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ প্রচেষ্টা কিছুটা হলেও সফল হতে পারে।
মতামত সম্পাদকীয়