আব্দুল কাইয়ুম :
সারি সারি লাইনে দাঁড়িয়ে সামনে এগোনোর প্রচেষ্টা। নেই কোন ভয়, উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা। ছোট-বড় সবারই উদ্দেশ্য এক, পার্কে প্রবেশের টিকেট। টিকেট হাতে আবারও ভিতরে প্রবেশের লাইনে দাঁড়ানো। সর্বশেষ ভিড় ঠেলে পার্কে প্রবেশ করে স্বস্তির হাসি। এটা হলো নগরীর কাজির দেউড়ির শিশু পার্কে প্রবেশ মুখের চিত্র।
এ চিত্র শুধুই কাজির দেউড়ি শিশু পার্কের না, নগরীর বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্স, আগ্রাবাদ শিশু পার্কসহ নগরীর বিনোদনকেন্দ্রেগুলোর। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নগরীর এসব বিনোদনকেন্দ্র ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের আশঙ্কায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মানার কথা বলা হলেও পার্কে মানা হচ্ছে না কিছুই। পার্কে প্রবেশের মুখে ভিড় দেখে মনে হয় সবকিছুই স্বাভাবিক। দর্শনার্থীদের চোখে-মুখে নেই ভয় বা উৎকণ্ঠা। পার্কে প্রবেশের আগে মুখে মাস্ক থাকলেও ভিতরে ঢুকে মুখে মাস্ক দেখতে পাওয়াই দুষ্কর। এ রকম অসচেতন ও অবহেলায় পার্কের মধ্যে শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সবাই মেতে আছেন আনন্দ হাসিঠাট্টায়।
করোনার মধ্যে পার্কে ভিড়ের মধ্যে নিজেকে কতটা নিরাপদ ভাবছেন এ প্রশ্নটা করলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে নিজেদের আসাকে স্বাভাবিক হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। তাদেরই একজন বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্সে আসা বুবলী বলেন, ‘করোনা করোনা করে সারাদিন ঘরে বসে থাকব? বাচ্চারা আর ঘরে থাকতে চায় না, তাই তাদের নিয়ে একটু ঘুরতে এসেছি।’
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ঘুরতে আসা পবন জানায়, ‘ছুটির দিনে ঘুরতে তো হবে, বাসায় তো আর বসে থাকা যাবে না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি।’
কাজির দেউড়ি শিশু পার্কে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ওয়াহিদুল আলম জানান, সবাই তো বের হচ্ছে, বাচ্চারা আর কতদিন বাসায় বসে থাকবে। তাই তাদের পার্কে ঘুরতে নিয়ে এসেছি।
ওয়াহিদুল আলমের মতো শিশু পার্কে ঘুরতে আসা বেশিরভাগ দর্শনার্থী জানায়, করোনার কারণে অনেকদিন বের হতে পারেনি। ছুটির দিনে পরিবারের সবাই মিলে অবসর সময় কাটানোর জন্য ঘুরতে আসা। করোনা বলেই তো আর বাসায় বন্দি থাকতে পারবো না।
পার্কে ভিড়ের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি কেমন সে বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ভিড় জায়গা পরিহার করার জন্য প্রতিনিয়ত বলেই যাচ্ছি, লোকজন যদি নিজেদের ও পরিবারের স্বার্থে সচেতন না হয় তাহলে সংক্রমণের হার আরো বাড়তে পারে। এছাড়া প্রশাসনকে প্রতিনিয়ত বিনোদনকেন্দ্র থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে সংখ্যা সীমিত রাখার পরামর্শ দিচ্ছি।
বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে কেন সামাজিক দূরত্ব মানছে না তার কারণ জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ জেড এম শরীফ হোসেন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে সচেতন করে যাচ্ছি। পার্ক বা বিনোদনকেন্দ্র সীমিতকরণ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় থেকে কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।