সরকারি বেসরকারি কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে করোনাকালে মানুষের অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে ব্যয় বাড়লেও মানুষ আগের চাইতে সঞ্চয় করছে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৯৮ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে ২০২০-২০২১ সালের প্রথম ৫ মাসে মানুষ ১৯ হাজার ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন আর গত ৬ মাসে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদাও করা গেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি, যা একটি রেকর্ড। গত বছর এপ্রিল থেকে ব্যাংক আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশে নেমে এলেও ব্যাংকে আমানত বেড়েছে। সঞ্চয় পত্রের সুদ ১২ শতাংশ রাখা হয়েছে তবে সুদের ওপর আয়কর ১০ শতাংশ করা হলেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেনি, বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার অনিশ্চয়তায় মানুষ সঞ্চয়ের দিকে ঝুঁকেছে। করোনার এই অনিশ্চিত সময় কখন শেষ হয় বলা যায় না, নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্তরা ভোগ, বিনোদনে খরচ কম করেছে, অনাবশ্যক ব্যয় পরিহার করা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সন্তানদের শিক্ষা ব্যয় কমেছে। সামান্য সঞ্চয়ও বিপদে কাজে লাগবে এই আশায় সঞ্চয়ে ঝুঁকেছে মানুষ। তাছাড়া করোনার সময়টিতে বিনিযোগও তেমন হয়নি ফলে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার প্রয়োজন দেখা দেয়নি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিক ও অনাবশ্যক ব্যয় কমিয়েছে।
করোনার কারণে খরচ কমিয়ে অনেকে নতুন করে সঞ্চয় শুরু করেছেন। তাই সঞ্চয়ী আমানতও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংকগুলিতে আমানত ছিল ১২ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকায়।
করোনাকালে গত কয়েকমাসে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সও বেশি এসেছে, অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ হয়েছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রে লাভ বেশি, ঝুঁকি কম, তাই মানুষ নিরাপদ হিসেবে এখানে বিনিয়োগ করছেন।
এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং তথা ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে সঞ্চয়ে।
সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মাধ্যম সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক ও শেয়ার বাজার। ভোগ, অনাবশ্যক ব্যয় কমায় মুদ্রাস্ফীতিও তেমন বাড়েনি। সঞ্চয় বাড়লে সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন কাজেও গতি আসে। করোনাকাল মানুষকে সচেতন হতে শিখিয়েছে, জীবন ও জীবিকার সংগ্রাম একসঙ্গে চালানো, পরিমিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হলে সমাজে বৈষম্যও হ্রাস পাবে, মূল্যস্ফীতি না হলে বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকলে, সরকারি সেবার সুযোগ সহজ ও সুলভ হলে, স্বাস্থ্যসেবার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিলে মানুষের জীবন যাপন সহজতর হয়ে উঠবে। সামগ্রিক বিবেচনায় সঞ্চয় প্রবণতা মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তদের জীবন প্রবাহে শুভ ফল দেবে।