নগরীতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে না পেরে অধিকাংশ মানুষ উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। যাদের দ্বিতীয় ডোজের টিকার সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে তাদের প্রথম ডোজের টিকা কতদিন সুরক্ষা দিতে সক্ষম কিংবা প্রথম ডোজ এক কোম্পানির টিকা নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ অন্য কোম্পানির টিকা আদৌ গ্রহণ করা যাবে কিনা সে সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত সুনির্দিষ্টভাবে না পাওয়ায় দেশবাসীর মনে উদ্বেগ, অস্বস্তি রয়েছে। টিকার নতুন সরবরাহ দ্রুত না হলে শুধু নগরী নয় পুরো চট্টগ্রাম জেলায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে বলছেন কর্মকর্তারা। জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী জানান, চট্টগ্রামে ১ লাখের কিছু বেশি এবং সারাদেশে ১৭ লাখের মতো দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া বাকি আছে। চট্টগ্রামে যে অবশিষ্ট দ্বিতীয় ডোজের অল্প টিকা রয়েছে তা ‘অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত’ ও ‘ফ্রন্ট লাইনার’দের দেয়া হচ্ছে, আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে তাও শেষ হয়ে যাবে, এমনই জানা গেছে।
বাংলাদেশে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনাকার টিকাই দেয়া হয়েছে। ভারতের সংকটময় পরিস্থিতিতে সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহ করছেনা, বাংলাদেশ এ ব্যাপারে পুনঃপুন অনুরোধ জানিয়েছে। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকায় উপহার হিসেবে কিছু টিকা দেয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করকে অনুরোধ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বৃত্ত অ্যাস্ট্রোজেনাকার টিকা পেতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এদিকে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা পেতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মন্থরতার কথাও সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। টিকা নিয়ে বৈশ্বিক কূটনীতিও আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীন ও রাশিয়ার টিকা অনুমোদন দেয়নি দীর্ঘসময় পর্যন্ত। কয়দিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই দুই দেশের টিকার অনুমোদন দিয়েছে। এই টিকা কূটনীতির কারণে ছোট ও কম উন্নত দেশগুলি টিকা সংগ্রহ করতে পারেনি অন্যদিকে ইউরোপÑআমেরিকার কোম্পানিগুলির টিকা ধনী দেশগুলি আগেই অতিরিক্ত কিনে নিয়েছে।
করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে দেশের অধিকাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনা প্রয়োজন। প্রথম টিকা প্রদান কার্যক্রম বর্তমানে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়েছে। এদিকে কিছুদিন নি¤œগামী থাকার পর পুনরায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। ঈদে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে যেভাবে মানুষ গ্রামের বাড়িতে গেছে ও ফিরছে তাতে সংক্রমণ পরিস্থিতি সামনের দিনগুলিতে বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যবিদরা। তদুপরি ভারত থেকে আসা বাংলাদেশীদের মধ্যে করোনা সংক্রমিত রোগী পাওয়া যাচ্ছে, এদের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও শনাক্ত হচ্ছে যা আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। বৈধ পথে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা থাকলেও যে বিপুল সংখ্যক মানুষ অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছেন তাদের সংক্রমণ পরিস্থিতি জানা যাচ্ছে না, এরা দেশে সংক্রমণ আরো বাড়াবে এমন কি তা মারাত্মক পরিস্থিতির রূপ নিতে পারে এমন আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারির কথা বলছেন। দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রথম ধাক্কায় সংক্রমণ ও মৃত্যুতে স্বজনদের অসহায়তা আমরা দেখেছি।
করোনার এই পরিস্থিতিতে দ্রুত সরকারকে টিকার ব্যবস্থা করে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে, এখানে কোনোরূপ শৈথিল্য কিংবা দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়। জেলাÑউপজেলাসহ দেশের সকল হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ ও আইসিইউ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। সেই সাথে জনগণকে বিধিনিষেধ মান্য করে নিজের পরিবার ও দেশের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়