করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, টিকায় ভিড় কমছে

স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানুষ ভিড় করছে শপিংমল ও বিভিন্ন মার্কেটে। করোনা সংক্রমণ বাড়লে অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরছেন না। গতকাল শনিবার বিকালে জহুরহকার্স মার্কেট থেকে তোলা ছবি রনী দে

অসচেতন গোষ্ঠী এখনও টিকার বাইরে রয়েছে : ডা. আব্দুর রব

ভূঁইয়া নজরুল <<<
৫৫ বছর বয়সী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রহিম মিঞা। করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘নেওয়া হয়নি। কেন নেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন করা, প্রিন্ট নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যাওয়া অনেক ঝামেলার কাজ। টিকা নেইনি তো কি হয়েছে? রহিমা মিঞার মতো বিভিন্ন পেশার অনেক মানুষ রয়েছে, যারা করোনার ভ্যাকসিন নেননি। অথচ ভ্যাকসিন নিলে করোনা ঝুঁকি থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ নিরাপদ থাকা যায়।
কথা হয় নগরের পাহাড়তলী বাজারের সবজি আড়তদার রফিকুল ইসলামের সাথে। ৫২ বছর বয়সী রফিকুল ইসলামও ভ্যাকসিন না নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যদি রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার সুযোগ দিতো তাহলে আমাদের পক্ষে ভ্যাকসিন নেওয়া সহজ হতো। কতজন মানুষ নিজেরা রেজিস্ট্রেশন করে টিকাদান কেন্দ্রে যেতে পারবে?’
সিভিল সার্জন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে টিকাদান (ভ্যাকসিন) কর্মসূচি শুরু হওয়ার সময় নিবন্ধনে খুব চাপ ছিল। ৭ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন করেছিল ১১ হাজার ১৬০ জন এবং টিকা দিয়েছিল এক হাজার ৯০ জন। ৮ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ৩০৬ জনে উন্নীত হয়েছিল এবং টিকা দিয়েছিল ৩ হাজার ৮৮৮ জন। পরবর্তীতে ১৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের সংখ্যা আরো বেড়ে ৩৫ হাজার ৮৩৭ এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৯ হাজার ৮৭৬ জন হয়েছিল। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা দিয়েছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০ হাজার ৯০৮ জন। ফেব্রুয়ারি মাস জুড়েই ছিল নিবন্ধন ও টিকার চাপ। কিন্ত সময় বাড়তে থাকার সাথে সাথে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় কমতে থাকে। গত সপ্তাহে কাট্টলী মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, টিকাদান কেন্দ্রে মানুষের ভিড় নেই। এক বা দুজন করে আসে এবং টিকা নিয়ে চলে যায়। অথচ প্রথমদিকে সেখানে ভিড় বেড়ে যাওয়ায় সাবেক মেয়র মনজুর আলম টিকাদান কেন্দ্রটি তার কলেজে স্থানান্তর করেছিলেন। একইচিত্র ছিল বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালসহ নগরের ১১ টিকাদান কেন্দ্রে।
প্রথমদিকে চাপ থাকার পর ধীরে ধীরে চাপ কমে যাওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুর রব বলেন, ‘প্রথমদিকে সচেতন মানুষদের অনেকেই ভ্যাকসিন নিয়েছে। এখন যারা বাকি রয়েছে, তাদের মধ্যে অসচেতন মানুষের সংখ্যাই বেশি। এই অসচেতনগোষ্ঠী টিকা দেয়ার জন্য নিবন্ধন করা এবং প্রিন্ট কপি নিয়ে কেন্দ্রে যাওয়াকে হয়তো ঝামেলা মনে করছেন। আর এতেই কমছে করোনার টিকা দেয়ার নিবন্ধনের চাপ।’
তিনি আরো বলেন, ‘দুই ডোজের টিকা দেয়ার পর করোনা থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ নিরাপদ থাকা যায়। তারপরও যদি কারো করোনা হয় তাহলে সংকটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।’
একই মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এস এম হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘দেশের অন্যান্যা জেলা থেকে চট্টগ্রামে টিকা দেওয়ার হার বেশি। তবে শিক্ষিত ও সচেতন জনগোষ্ঠী টিকা গ্রহণ করলেও বিশাল একটি অংশ টিকার বাইরে রয়েছে। এখন দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয়ে গেছে। দিবো, দিচ্ছি বলে যে গ্রুপটি রয়েছে, এখন হয়তো তারা টিকা গ্রহণে এগিয়ে আসবে। নিজে নিরাপদ থাকবে এবং পরিবারের সদস্যদেরও নিরাপদ রাখবে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে ১১টি টিকদান কেন্দ্র রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বিমান বাহিনী হাসপাতাল, নৌ-বাহিনী হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, চসিক জেনারেল হাসপাতাল, মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল, চসিক বন্দরটিলা ও হাসপাতাল ছাফা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল। এসব হাসপাতালের সাথে এখন যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল। সরকারের প্রাথমিক নির্দেশনা অনুযায়ী করোনায় সম্মুখসারির যোদ্ধা, স্বাস্থ্য বিভাগ, সরকারি অফিস আদালত, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকের চাকরিজীবীরা টিকা গ্রহণে অগ্রাধিকার পাবে। পরবর্তীতে টিকা নিবন্ধনের সুরক্ষা অ্যাপে বয়স ৪০ বছর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর গত ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদানও শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৪৫৮ জন এবং টিকা গ্রহণ করেছেন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮ জন। গত শুক্রবার চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ৩ লাখ ৬ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন এসেছে। এতে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট টিকা এসেছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ডোজ। এদিকে চট্টগ্রামে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং মৃত্যুও বাড়ছে। করোনা রোগী বৃদ্ধির এ চিত্র শুধু চট্টগ্রামেই নয়, সারাদেশে।