একটি বিষাদ ও বিবর্ণ বছরের সমাপ্তিতে মানুষের ভেতরে জেগে উঠেছে নতুন আশার চর। ২০২০ সালের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বহুপ্রাণ কেড়ে নিয়েছে দেশে ও বিদেশে। আমাদের দেশেইে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে ৭ হাজার ৫৯৯জন। মোট শনাক্ত হয়েছে ৫ লক্ষ ১৫ হাজার ১৮৪ জন। এই আতংক ও অবসাদগ্রস্ত সময়কে অতিক্রম করে বিশ্বমানুষের সমান্তরালে বাংলাদেশের মানুষও এখন স্বপ্ন দেখছে করোনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তির। প্রতিদিনই এ বিষয়ে নতুন-নতুন আশা জাগানিয়া খবর আসছে গণমাধমে। গতকাল সংবাদপত্রের পাতায় এসেছে, ৫০ লাখ টিকার জন্য ৬০০ কোটি টাকা ভারতে পাঠাবে সরকার। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কেনার জন্যে প্রথম চালানের টাকা বাবদ ওই পরিমাণ টাকা পাঠানো হচ্ছে।
উল্লেখ থাকা দরকার যে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা যুক্তরাজ্য ও ভারতে অনুমোদন পেয়েছে। ্এই ধারায় বাংলাদেশ সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি টিকা আনবে। আর এই টিকা সরবরাহ করবে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। সেরাম ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ ও ভারতে একই দামে টিকা বিক্রি করবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশি টাকায় প্রতিটি টিকার দাম পড়বে ৪২৫ টাকা। দেশের অভ্যন্তরে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে সরকার ইতোমধ্যে অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবিদার ব্যক্তি ও সংস্থার তালিকা করেছে। এর মধ্যে আছে স্বাস্থকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশনের কর্মী, দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা ব্যক্তি।
দেশবাসীর করোনাভীতির আবহ নির্মূল সরকার নিশ্চিত করোনার টিকার সংস্থান করতে বিপুলভাবে সমর্থ হবে। কারণ প্রথম থেকেই সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যথেষ্ট সজাগতার পরিচয় দিয়েছে এবং ত্বরিৎ ব্যবস্থা নিয়ে সফল হয়েছে। এটা যেমন ঘোর করোনাকালে দেখা গেছে, তেমনি করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারের এ দ্রুতগতির তৎপরতার সাথে দেশ ও জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটছে নিঃসন্দেহে।
করোনা বিপর্যস্ত দেশের মানুষের এই আশা পরিপূরণে সরকার যে-সমস্ত সংস্থা, লোকবল ও সাংগঠনিক কাঠামো ব্যবহার করতে চলেছে, সেগুলোতে এদেশের সন্তানেরাই নানা পদ-পদবি অলংকৃত করছেন। এই নয়া স্বাভাবিকতাকে প্রকৃত সমব্যথী ও সহমর্মিতায় এগিয়ে নিয়ে যেতে তাদের ভূমিকাই প্রধান ও বিকল্পহীন। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত তাদের রয়েছে সবিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য। সুষ্ঠু ও সুস্থভাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মতৎপরতা এই নতুন যুদ্ধকে সঠিক ও অভ্রান্তভাবে ফলপ্রসূ করে তুলতে পারে। বরং বলা যায়, তুঙ্গ করোনাকালীন ভীতির পর্ব থেকে এই যুদ্ধই হবে আগামী দিনের হাস্যোজ্জ্বল বাংলাদেশের মুখাবয়ব। করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও তা সারাদেশের আপামর মানুষের মাঝে সফল প্রয়োগে সরকার ষোলআনা সফল হবো, এই প্রত্যাশা।
মতামত সম্পাদকীয়