করোনা ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হতে চলেছে, গত কয়েকদিনে মৃত্যু ৭৫ থেকে ৮৫ এর মধ্যে, যা অশনিসংকেত আগামী দিনগুলির জন্য। শনাক্ত ৪ হাজারের ওপরে, রাজশাহী, খুলনা জেলার মারাত্মক পরিস্থিতি, সীমান্তবর্তী জেলাগুলির ক্রমাবনতি উদ্বেগের সৃষ্টি করে চলেছে জনমনে। সামনের ঈদের সময় মানুষের ঘরে ফেরা ও অবাধ চলাচলের মতো সম্ভাব্য পরিস্থিতি শংকায় ফেলেছে প্রশাসন ও জনসাধারণকে। ইতিমধ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকাকে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। ঢাকার আশেপাশের ৪টি জেলাসহ ৭টি জেলায় জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরণের চলাচল ও কার্যক্রম বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ সব জেলায় ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস চলবে না, যাত্রীবাহী নৌযানও বন্ধ থাকবে। দূরের যাত্রায় এসব জেলার স্টেশনে ট্রেন থামবে না।
এদিকে চট্টগ্রামে পরিস্থিতির অবনতি রোধে ৩০ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন রাত ৮টার পর সকল দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় ৭দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আগে গ্রামের এলাকা করোনা থেকে অনেকটা মুক্ত থাকলেও এখন সে অবস্থা নেই। দেখে শুনে মনে হচ্ছে, করোনা সর্বগ্রাসী রূপ নিতে চলেছে। করোনার এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা, টিকা কার্যক্রমে ধীরগতি মানুষের মনে নানা শঙ্কা তৈরি করছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে ঢাকায় যথাসময়ে প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়ায় মানুষ অসহায় অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। বর্তমানে করোনার যে ধরন তাতে আইসিইউ ও অক্সিজেন এর প্রয়োজন বেশি অথচ এখানেই ঘাটতি। রাজশাহী, খুলনা বিভাগের জেলা উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার করুণ দশা সংবাদ মাধ্যমে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনগণকে সচেতন হতে পরামর্শ দিয়ে আসছেন, ভাল কথা, কিন্তু স্বাস্থ্যসেবার উন্নতিতে তার দফতরের শম্বুকগতি উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। তদুপরি এই মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দফতরের কাজের মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। পরামর্শক কমিটি কিংবা বিশেষজ্ঞরা যে সব পরামর্শ দিচ্ছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সরকার কতটা আমলে নিচ্ছে তা বুঝা মুশকিল। স্থানীয় প্রশাসন বিধিনিষেধ আরোপ করছে কিন্তু এটি করতে প্রশাসনের যে সব কঠোর ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তা তেমন প্রতিভাত হচ্ছে না।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে টিকা ছাড়া গত্যন্তর নেই। টিকা কার্যক্রম নতুন করে শুরু হয়েছে তবে তা সীমিত আকারে। চীনÑরাশিয়ার টিকা সংগ্রহ সময়মতো করতে না পারলে পরিস্থিতির উন্নতি সহজে হবে না। টিকা নিয়ে বিশ্ব কূটনীতিও চলছে। কিছু দেশের টিকা মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু যাদের বেশি প্রয়োজন তারা পাচ্ছে না।
আমরা মনে করি, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে জাতীয় পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ নিয়ে টাক্সফোর্স গঠন করা এখন সময়ের দাবি।
শুধু বিধিনিষেধ ঘোষণা নয় কেবল, তা প্রতিপালনে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা চাই। জনগণের করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। গ্রাম ও শহরে ওয়ার্ড পর্যায়ে গণকমিটি করে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সচেষ্ট হতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়