স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বাড়ার
ঝুঁকি বেশি : বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক
মোহাম্মদ কাইয়ুম <<
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও আজ থেকে চালু হচ্ছে শপিংমল ও দোকানপাট। পাশাপাশি গণপরিবহন ও ট্রেন চলাচলের বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছে সরকার। লকডাউনে দোকানপাট শপিংমল খুলে দেওয়ায় আবারও বাড়তে পারে সংক্রমণ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত তদারকি না করলে পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারে। এছাড়া মাস্ক পরিধানের ব্যাপারে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় চলতি মাসের ৫ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের লকডাউন দেওয়া হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া হয়। পরে চলমান লকডাউন বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। সর্বাত্মক লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকার পাশাপাশি চলাফেরা সীমিত থাকায় সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটো কিছুটা কমতে থাকে। তবে চলমান লকডাউনের মধ্যে আবারও মার্কেট খোলায় সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি দেখছে বিশেষজ্ঞরা। শর্ত স্বাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খুললেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যাপারে আবারে সংশয় থেকে যায়।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে চট্টগ্রামের সংক্রমণ চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, মার্চ মাসের শুরুর দিকে সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও মার্চের শেষে এসে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই করোনায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। মধ্য এপ্রিলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তবে চলমান সর্বাত্মক লকডাউনের কারণে কয়েকদিন ধরেই সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমতে শুরু করে।
চলতি মাসের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চট্টগ্রামে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যেখানে করোনায় আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৬৫৭ জন, সেখানে চলতি মাসের ২৪ দিনেই আক্রান্ত হয় ৮ হাজার ৭২৯ জন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে শনাক্ত হয় ২ হাজার ৭২৮ জন। পাশাপাশি প্রথম সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১১ জন। এরই মধ্যে প্রথম সপ্তাহে করোনায় চট্টগ্রামে ২৬ শতাংশ সংক্রমণ হার নিয়ে এর আগের ৫১৮ জনের সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড গড়ে। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে থাকে। দ্বিতীয় সপ্তাহে ২ হাজার ৯৯৩ জন শনাক্তের পাশাপাশি করোনায় মারা যায় ৩৭ জন। দ্বিতীয় দফায় লকডাউন শুরু হওয়ায় তৃতীয় সপ্তাহে এসে দ্বিতীয় সপ্তাহের তুলনায় শনাক্ত কিছুটা কমে আক্রান্ত হয় ২ হাজার ১৫৩ জন। পাশাপাশি এ সময়ে সর্বোচ্চ ৪০ জন মারা যায়। তৃতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ায় আক্রান্ত কমে আসলেও সংক্রমণের হার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। সর্বশেষ চতুর্থ সপ্তাহে এসে আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। চলতি সপ্তাহের তিন দিনে ৮৫৫ আক্রান্তের পাশাপাশি করোনায় মারা গেছে ৯ জন।
দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ায় করোনা ঝুঁকি বাড়বে কিনা? এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব মাসুম সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে শপিংমল খুলে দেওয়ায় কিছু ঝুঁকি থেকেই যাবে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খুলে দেওয়ায় ঝুঁকি বাড়বে। স্বল্প সময়ে দোকানপাট খোলা থাকায় মানুষের ভিড় বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মতে শপিংমল খোলা রাখার সময় বাড়ানো উচিত।
ভিড় এড়ানো ও শারীরিক দূরত্ব মেনে যদি দোকানপাট খোলা রাখার সময় বাড়ায় তাহলে ক্রেতা তাদের পছন্দ মতো সময়ে মার্কেটে আসলে ভিড় কম থাকবে।
ভারতের মতো বাংলাদেশেও যেকোনো সময়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে মন্তব্য করে ডা. আবদুর রব বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যে হারে সংক্রমণ ও মৃত্যু হচ্ছে সচেতনা মেনে না চললেও বাংলাদেশেও এর চেয়ে ভয়ঙ্কর হতে পারে। যদি স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরিধান করার ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা না যায় তাহলে সারাবছর লকডাউন দিয়েও কোন সুফল পাওয়া যাবে না।
স্বাস্থ্যবিধি না মানার উপরে করোনা ঝুঁকি নির্ভর করে উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, করোনার ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে তিনটি বিষয় মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্কের ব্যবহার ও হাত ধোয়া। মার্কেটে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব না হলেও বাকি দুইটি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। ঘরের বাইরে বের হলেই মাস্ক ব্যবহার করা ও কাজ শেষে ঘরে আসার পরে হাত ধোয়ার ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। এছাড়া উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসরে শরণাপন্ন হতে হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘জনগণ যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, তাহলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লকডাউন দিয়েও যদি মাস্ক পরাতে না পারলে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়বেই থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ‘কথার মাধ্যমে করোনার জীবাণু ছড়ানোয় ছোট জায়গায় বেশি মানুষ থাকলে মাস্ক ব্যবহার না করলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মানুষের জীবিকার তাগিদে শপিংমল খোলা চালু করা হলেও ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে মাস্ক পরাতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।