চমেক হাসপাতালের মসজিদের ঈমাম ও বাসার মালিকের আপত্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর একজন মুক্তিযোদ্ধার লাশের গোসলের জন্য জায়গা পাওয়া গেল না চট্টগ্রাম মহানগরীতে। চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মসজিদের ঈমামের আপত্তি, ভবন মালিকের অনাপত্তি থাকায় গোসল ছাড়া অবস্থায় গ্রামের বাড়ি মিরসরাইয়ে নিয়ে কাফনের কাজ শেষ করে দাফন দেয়া হয়।
মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম নুর হোসেন। ৬৬ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা ঈদগাহ কাঁচা বাজার এলাকায় একটি ফার্মেসি পরিচালনা করতেন। গত মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছিলেন বলে মৃতের একমাত্র ছেলে কামরম্নল ইসলাম জানান। কামরম্নল ইসলাম বলেন, ‘ সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার পর কাফনের জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক টিমদের ফোন করা হলে উনারা চলে আসেন। কিন্তু গোসল করানোর জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মসজিদে ( বদনাশাহ মাজারের গেইটের দিকে যেতে হাতের ডানের বড় মসজিদটি) গেলে সেখানকার ঈমাম গোসলের জন্য জায়গা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।‘
তিনি বলেন, ঈমাম সাহেবকে অনেক অনুনয় বিনয় করে বললেও তিনি একটু জায়গা দেননি। এতে নাকি প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরবর্তীতে আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকি সেই ভবন মালিকও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে গোসলের জন্য ভবনের নিচে জায়গা দিতে রাজি হননি। আরো কয়েক জায়গায় খুঁজেও জায়গা না পেয়ে গোসল ছাড়াই আমাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই দুপুর একটায়। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কাফনের জন্য জায়গা খুঁজেছিলাম। পরবর্তীতে আমাদের বাড়ি মিরসরাইয়ের নয় দুয়ার এলাকার নিজ তালুক গ্রামে নিয়ে কাফনের কাজ শেষ করে দাফন করা হয়।
এবিষয়ে কথা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক এবং কাফনের কাজে নেতৃত্ব দেয়া স্বেচ্ছাসেবক এ বি এইচ মোর্শেদের সাথে। তিনি বলেন,‘ ওই মসজিদের ঈমামকে আমরাও অনুরোধ করেছিলাম একটু জায়গা দিতে। কিন’ তিনি তা দেননি। একজন মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর গোসলের জন্য জায়গা পাবে না তা দু:খজনক।’
তিনি আরো বলেন, আমরা মেডিক্যালের বারান্দায়ও কাফনের কাজ করতে পারি। কিন’মেডিক্যালে রোগীর পরিমান বেশি থাকায় বারান্দায়ও রোগী ছিল, তাই জায়গা পাওয়া যায়নি।
কিন’ সরকারি এই মসজিদে কেন মৃত ব্যক্তিকে গোসলের জন্য সুযোগ দেয়া হবে না জানতে কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবিরের সাথে। তিনি বলেন,‘ সরকারি এই স্থাপনার মালিক তো মসজিদের ঈমাম নয়। আমি নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি মৃত ব্যক্তির গোসলের সুযোগ দিতে, মেডিক্যালে মারা যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই সৎকারের সুযোগ দিতে হবে, ঈমাম সাহেব কেন দিবেন না। উনি মৃতদের সৎকারের জন্য জায়গা দেন না এই অভিযোগ এর আগেও আমার কানে একবার এসেছিল। ঘটনার সময় বিষয়টি আমার নলেজে এলে তখনই ব্যবস্থা নিতাম। আমি এর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উলেস্নখ্য, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মানুষের মৃত্যু দিন দিন বাড়ছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে করোনা উপসর্গে অনেকে মারা পড়ছে।