‘ রোগীদের মধ্যে লক্ষণ কম, ভর্তি হওয়ার পর দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটছে’
ভূঁইয়া নজরুল <<
‘হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরপরই রোগীদের অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যাচ্ছে, এমনকি অনেকের ৭০ থেকে ৮০ লিটার করে অক্সিজেন লাগছে। রোগীদের দ্রুত এ অবনতি মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’ বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের সম্পর্কে এমনই মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিটের কনসালটেন্ট ডা. মাহাদী হাসান রাসেল।
একই মত প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবদুর রব ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এস এম হুমায়ুন কবির।
ডা. এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘করোনা রোগীদের আমরা প্রথমে হলুদ জোনে রাখি। পরে সেখান থেকে লাল জোনে স্থানান্তর করি। কিন্তু বর্তমানে ভর্তি হওয়া রোগীদের দ্রুত অবনতি ঘটছে।’
দ্রুত এই অবনতি কেন তা জানতে চাইলে ডা. এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এবারের করোনা ভাইরাসের চিত্রই মনে হয় এমন। এরপরও ঢাকার চেয়ে এখনও ভাল অবস্থায় রয়েছে চট্টগ্রাম।’
চট্টগ্রামে চলতি মাসে একদিনে সর্বোচ্চ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন সাত থেকে আটজন করে মারা যাচ্ছে। সিভিল সার্জন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেখা যায়, চট্টগ্রামে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। কিন্তু ৬০ বছরের অধিক আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই হার ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। অপরদিকে সারাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এই হিসেব বলছে সারাদেশের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম এখনও ভালো অবস্থানে রয়েছে। তারপরও চলতি মাসে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় অনেকের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।
চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় শুরু থেকে কাজ করছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. আবদুর রব। তিনি বলেন, এবারের করোনায় রোগীদের মধ্যে লক্ষণ কম দেখা যাচ্ছে। আর রোগীরা যখন বুঝতে পারে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। রোগীরা হাসপাতালের ভর্তির পর অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত নেমে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
এবারের আক্রান্তের আরেকটি শঙ্কার কথা জানান চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের করোনা বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মাহাদী হাসান রাসেল। তিনি বলেন, ‘এবার বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণদের একটি অংশও আক্রান্ত হচ্ছে। আর তরুণদের এ অংশটি নিজেরা জানেও না তাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ কতো, তাদের প্রেসার কতো। আক্রান্তের পর দেখা যায় তাদের অনেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সম্প্রতি আমাদের হাসপাতালে কয়েকজন তরুণ মারাও গেছেন করোনায়।’
চিকিৎসকের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় জেলা সিভিল সার্জন থেকে পাওয়া তথ্যে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৯৮৬ জন, আক্রান্তের হিসেবে যা ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এদের মধ্যে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৬৫৭ জন (১৮.৬%) এবং মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ১২০ জন (১৫.২৪%) এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এই হিসেবে দেখা যায় করোনা আক্রান্তে তরুণরা শীর্ষে।
এদিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসকরা বারবার বলে আসছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিম প্রতিদিন জরিমানা আদায় করছেন। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাজারে যাচ্ছে। রাস্তাঘাটে ভিড় করছে, তাতে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।