বাজেটে করপোরেট করহার হ্রাস করায় বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণ সম্প্রসারিত হবে, তবে ৫.৬% মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেই অনুপাতে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়-সীমাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
ঘোষিত বাজেটের উপর দি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে সভাপতি মাহবুবুল আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন।
তিনি এ বাজেট করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া এবং যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেন।
গতকাল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগং চেম্বার সভাপতি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
চেম্বার সভাপতি বলেন- বাজেটে মোট ব্যয় ৬ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, মোট আয় ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ২শত ৭১ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লক্ষ ৪১ হাজার ৭শত ৯৩ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ৪ লক্ষ ১১ হাজার ৪শত ৬ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৭৩ হাজার ১শত ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে যা সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ঘাটতি মোকাবেলায় ক্রমবর্ধমান ঋণের ক্ষেত্রে সরকারের সচেতন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।বাজেটে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২২.৫% থেকে কমিয়ে ২০%, পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির কর ৩০% থেকে কমিয়ে ২৭.৫% এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৫% থেকে কমিয়ে ২২.৫% করা হয়েছে যা বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। ট্রেডিং পণ্য সরবরাহের উপর উৎসে কর ৭% থেকে কমিয়ে ৫% করা হয়েছে যা ইতিবাচক। ম্যানুফ্যাকচারারদের নিকট কাঁচামাল সরবরাহে উৎসে কর ৭% থেকে কমিয়ে ৪% করা হয়েছে যা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। পারকুইজিট খাতে অনুমোদনযোগ্য ব্যয়সীমা ৫ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ১০ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। মোট কর্মচারীর ১০% বা ২৫ জনের অধিক প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হলে প্রদেয় করের ৫% রেয়াত দেয়া হবে যা প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। এক বা একাধিক উৎপাদনস্থলের ক্ষেত্রে কম্পিউটারাইজড অটোমেটেড পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষণের শর্তে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন গ্রহণ করার বিধান আমরা স্বাগত জানাই।
উৎসে ভ্যাট কর্তনের ক্ষেত্রে সরবরাহকারী কর্তৃক হ্রাস সংক্রান্ত সমন্বয় গ্রহণের সময়সীমা ২ কর মেয়াদ হতে বৃদ্ধি করে ৪ কর মেয়াদ করা হয়েছে যা ভ্যাটের ক্ষেত্রে ইতিবাচক। দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ চলাচল উৎসাহিত করতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করমুক্ত করা হয়েছে যা এই সেক্টরে নতুন বিনিয়োগে আশা যোগাবে। এছাড়া নির্ধারিত তারিখে মূসক বা টার্নওভার কর দাখিলপত্র পেশ করতে না পারার জরিমানা ১০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা এবং ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে রাজস্বের সমপরিমাণের অর্ধেক জরিমানা প্রস্তাব করা হয়েছে যা ব্যবসাবান্ধব।
আইসিটি খাতে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের টার্নওভার করহার ০.৬% এর পরিবর্তে ০.১% করা এই উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে। বিনিয়োগজনিত আয়কর রেয়াতের হার রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগের ১৫% করা হয়েছে।
স্টিলজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত এইচ আর কয়েল এবং অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে করহার ৫% থেকে কমিয়ে ৩% করা, স্বর্ণ আমদানিতে অগ্রিম কর বিলোপ এসব পণ্যের মূল্য হ্রাস করবে। তবে ব্যাংক সুদের উৎসে করহার কোম্পানি করদাতার জন্য ১০% থেকে ২০% করা এবং রপ্তানিকৃত পণ্যদ্রব্যের উৎসে কর ০.৫% এর পরিবর্তে ১% করা হয়েছে যা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তৈরিপোশাক শিল্পের মত অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রেও একই হারে কর ধার্য করার ফলে রপ্তানি পণ্য বহুমূখীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরবরাহের বিপরীতে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা এবং মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন করলেও রেয়াত প্রদান ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড সহজ করবে।
তিনি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার আমদানিতে ১০% এবং ল্যাপটপ ও কম্পিউটারে ব্যবহৃত টোনার, প্রিন্টার ইত্যাদি আমদানিতে ১৫% শুল্ক প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করেন। দেশে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরগাড়ি উৎপাদনে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করবে। পাইকারি ব্যবসায় কতিপয় ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫% থেকে কমিয়ে ১.৫% পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে যা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। কৃষি পণ্য, ফিশ ও পোল্ট্রি ফিড, পোল্ট্রি ফার্মের যন্ত্রপাতি, চিনি, ইস্পাতের কাঁচামাল, কাগজ ও কাপড় ইত্যাদি পণ্যের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। কোল্ড স্টোরেজ এর চিলার আমদানি শুল্ক ২৫% থেকে কমিয়ে ১০% করা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্যাট ১০% থেকে কমিয়ে ৫% নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে উল্লেখিত পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আমরা মনে করি।
এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিজ্ঞপ্তি
এ মুহূর্তের সংবাদ