রাজিব শর্মা »
সপ্তাহের ব্যবধানে কমতির দিকে রয়েছে ব্রয়লার মুরগী ও ডিমের দাম। তবে দুয়েকটা পণ্য বাদ দিলে প্রায় সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার রয়েছে লাগামহীন।
গত দুই সপ্তাহ ধরে সবজির বাজার কিছুটা কমতি দেখা গেলেও গতকাল বাড়তি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এ সপ্তাহ সরবরাহের কমতি রয়েছে। যার কারণে সবজি, মাছ, পেঁয়াজসহ নিত্যপয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি দেখা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরের অন্যতম কাঁচাবাজার বকসিরহাট ও চাক্তাইয়ের সানজিদা মার্কেট সরেজমিন ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায় ।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। আর কক মুরগি ২৮০ থেকে ৩১০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে । আর প্রতি ডজন মুরগির লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, হাঁসের ডিম ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৮০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। হিসেবে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগিতে ২০ টাকা, লেয়ার ২০ টাকা ও দেশী মুরগি ৪০ টাকা কেজি প্রতি কমেছে। আর ডিমের ডজনপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। এছাড়া অনান্য মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ও পাইকার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, শীতের আগে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে মুরগির রোগ দেখা যায়। তাই অনেক খামারিরা লোকসানের ভয়ে মুরগি কম দামে বিক্রি করে। যার কারণে খামারি পর্যায়ে দাম কমতি।
পরিবর্তন আসেনি মাছের বাজারে
এদিকে সরবরাহ বাড়লেও পরিবর্তন আসেনি মাছের বাজারে। গত সপ্তাহের মতো চড়া দামে বিক্রি হতে দেখা যায় সামুদ্রিক ও দেশী প্রায় সকল মাছ । বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ ৯০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, কৈ মাছ (চাষ ও দেশী) ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ (সাইজভেদে) ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সবজির দাম
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে আলু, বরবরটি, কাঁচামরিচ ছাড়া অনান্য সবজির দাম কিছুটা বাড়তি দরে বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ হিসেবে তারা জানান, সবজির সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। পুরোপুরি শীতের সবজি না আসায় দাম উঠানামা করছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতিকেজি ভারতীয় টমেটো ১২০ টাকা, দেশি টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১২০ টাকা, শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, দেশি শসা ৭০ টাকা, উচ্ছে ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৭০ টাকা, পটোল (হাইব্রিড) ৮০ টাকা, দেশি পটোল ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ (জাতভেদে) ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০ থেকে ১২০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। আর প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা। এছাড়া, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা করে ।
সবজি বিক্রেতা মো. রুবেল বলেন, গত দুই সপ্তাহ সরবরাহ বাড়তি থাকায় সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। মঙ্গলবার থেকে আড়তে দাম বাড়ায়, কিছুটা বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে ফুলকপি বিক্রি করেছি ৫০ টাকায় যা আজকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রায় সবজিতে ২০ টাকা বেড়েছে।
পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে
একদিকে সবজির দাম যেমন বাড়তি ঠিক অন্যদিকে কিছুটা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে ক্রস ও দেশি, দুই ধরনের পেঁয়াজই বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১১৫ টাকায় । আর দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, লাল আলু ২৫ টাকা, সাদা আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৩০ টাকা, দেশি রসুন ৮০ থেকে ১১০ টাকা, চায়না রসুন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা মান ভেদে ১৬০ দরে বিক্রি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা । চায়না রসুনের দামও বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা। আর দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য পচনশীল মসলাজাত পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত
পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বকসিরহাটের বিক্রেতা মো. শিমুল বলেন, খাতুনগঞ্জের আড়তে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমদানি বন্ধ থাকায়, দেশী পেঁয়াজ বাজারে না আসার কারণে দাম বেড়েছে বলে আমাদের জানান । আজকে (গতকাল) আমরা পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।
পরিবর্তন আসেনি যেসব প্রয়োজনীয় মুদিপণ্যের দামে
এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে মুদি দোকানের পণ্যের দামেও তেমন পরিবর্তন আসেনি। কেবল মসুর ডালের দাম কমেছে ১৫ টাকা ও খোলা চিনির দাম কমেছে ৫ টাকা। এছাড়া অন্য সব পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। মুদির দোকানগুলোতে প্রতিকেজি লালতীর, এসিআই, স্কয়ার কোম্পানির প্যাকেট পোলাও চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ৯০ থেকে ১৩০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৫০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ৯০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, মাষকলাই ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৭২ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা, খোলা ঘি ১ হাজার ২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১১০ টাকা, খোলা চিনি ৯৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৩০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া এলাচি ৪ হাজার ৭৫০ টাকা, দারুচিনি ৫০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২৮০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১ হাজার ৩৫০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ১ হাজার ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।




















































