কেঁদুলির মজমা
বশির আহমেদ
ফের একটি রেনেসাঁস ঘটুক,
আমি ফিরে যাই পঞ্চদশ শতাব্দীর ভেতর।
মাটিতে বাউলের গন্ধ খুঁজে পাই,
পাখির চোখে বাউল সকাল।
মাঘী কুয়াশায়ার ভেতর ডুবে যায় দক্ষিণের ধান ক্ষেত,
ক্ষেতের আইলে বাজে একতারা সুর,
ক্ষ্যাপা মনে জমাট বাঁধে সাঁইজির প্রেম।
রূঢ় মনে জোটে নাকী একাত্মবাদ?
ভেঙ্গে ফেল ভেতরের ভণ্ডামি তোরণ!
তৌহিদী আঘাত মুছে যাবে কেঁদুলির মজমায়!
ফেরারি মন
সুশান্ত হালদার
তোমাকেই চেয়েছিলাম
ভোরের কল্লোল যখন রাতের মোহময় উল্লাসে
ফেরারি মন তন্ময় চৈত্র ঝরা হেমন্তের বসন্ত উৎসবে
তোমাকেই চেয়েছিলাম
রাতের শবনম যখন ক্লান্ত অবসন্ন বকুল-ঝরা মিছিলে
ফেরারি মন উদিত প্রহর যখন হেসেছিল মাটিতে লুটিয়ে
তোমাকেই চেয়েছিলাম
উত্তর-বায়ু যখন ধেয়ে আসে অপরাজিতার নীল-চাদরে
ফেরারি মন মৌন তখন পাষাণ বুকের একলব্য সফরে!
তুমি হেমন্তের কবিতার পালক
মিয়া ইব্রাহিম
তুমি কী হেমন্তের শিশির ভেজা ভোরের আলো !
নাকি জলশব্দহীন এক জলপরি!
তোমার আগমনে মরবন্ধ ব্রক্ষপুত্র
একপলক মেলেছিলো নিঃসঙ্গ হৃদয়
ভালোবাসার মুগ্ধতার সংকলন ছড়িয়েছিলো
দুহাত জুড়ে জমিদার বাড়ির
শান বাঁধানো ঘাট
ময়মনসিংহ শহর যেনো নীলাঞ্জনা বিছিয়ে
বেঁধে ছিলো এক মায়াবী ইন্দ্রজাল
তুমি কী লজ্জাবতী দীঘির জলের ঢেউ
নাকি হেমন্তের অরব বিকেলে ফোঁটা
দাগহীন ছাতিম ফুলের গন্ধ!
তোমার ভালবাসার ঢেউয়ে ডুবে যায় সাইবেরিয়া
থেকে উড়ে আসা অতিথি পাখি !
বুকের উদরে দোল খায় ওম দেয়া
হেমন্তের বিরহী কবিতার পালক;
তুমি আসলে কেউ না-
দুঃখ বিলাসী কবির চোখে এঁকে দেয়া
বহুরূপী মেঘনার তীরে এক প্রমত্ত সরসী
হেমন্তের হলুদ সন্ধ্যায় মেঘনার বুক চিরে
ভেসে আসা প্রেম জাগানিয়া মেঘের কোলাজ
হেমন্তের কবিতার পালক
এক বাউল কবির জলশব্দহীন জলপরি!
নীলাঞ্জনা শুধু থাক
মোশতাক আহমেদ
ঘুর্ণিঝড় হাওয়ায় দলে যাক না তপোবন
চরাচর একাকার করে দিক না প্লাবন
ঘোর কালো আঁধারে আসুক না মরন-
নীলাঞ্জনা শুধু থাক।
বাহুতে বাহুতে তোমার আমার এ বন্ধন
প্রিয়তমা শুধু থাক স্পন্দিত বুকের কাছে
তোমার বুকের স্পন্দন আমার যৌবন ছুঁয়ে
তোমার ফুটন্ত মৌবনে নীলাঞ্জনা শুধু থাক।
নিঃশ্বাসের কাছাকাছি তোমার সঘন নিশ্বাসে
গহিন হৃদয়ে প্রেমের গহীন বিশ্বাসে।
নীলাঞ্জনা শুধু থাক।
জলোচ্ছাসে ভেসে যাক না পাতার কুটির
শুধু যাক না ছুঁয়ে ভেজা শরীরে শরীর
স্পর্শে গন্ধে হোক না এ যৌবন বসন্তে অধীর।
নীলাঞ্জনা শুধু থাক
ছাতিম ফুলের কবিতা
মিসির হাছনাইন
তোমার গায়ের সুবাস একখানা কবিতা হয়ে উঠুক
নগরের ছাতিম হয়ে ফুটুক, সেই মারাত্মক ঝাঁঝালো গন্ধ.. হৃদয় ভাঙা এক যুবকের নিঃশ্বাসে মনে পড়ুক হরিণীর হারিয়ে ফেলা দুঃখ হেমন্তের পাতাঝরা অরণ্যে একবিন্দু শিশির
বিষন্নতার পাশে আর কিছুক্ষণ হাত ধরে বসে থাকুক,
ঝরাপাতা হঠাৎ করে হেসে উঠুক, সে হাসিখান আকাশমণি গাছের আড়ালে চাঁদ হয়ে হাসুক, জীবন লেখা বইয়ের ভাঁজে একগুচ্ছ ফুল বছরের পর বছর অবহেলায় পচুক
তবুও লিখে রাখি ছাতিম কবিতায় মেয়েটা ভালো থাকুক, সব হেমন্তের নগর শহরে ফুলে ফুলে ফুটুক



















































