কবিতা

এখন নিমগ্ন হওয়ার সময়

অমল বড়ুয়া

এখন আমাদের নিমগ্ন হওয়ার সময়।
প্রবারণা পূর্ণিমার শাদা জোছনার
আলোকের ঝরনাধারায় কৃষ্ণচূড়ার রাঙময়
অগ্নিঝরা বরিষণে
এসো তুমি আর আমি
বেদনার তিলোত্তমা হাহুতাশ ঝেড়ে
হাতে হাত রেখে
গভীর উষ্ণতার গাঢ়তায়
চঞ্চল চারুলতার মতো দু’জন জড়িয়ে থেকে
ক্ষার সমুদ্রে ডুব দিই
অনন্তে…..
প্রজাপতির ডানায়
মেঘভাঙ্গা খরতাপে
কাঁশফুলের হিজলের শিমুলের
পরাগমেখে অমল অনুরাগে
নীল শুভ্র নীলিমার অকিঞ্চিত বুক
লীন করে নিই আমাদের অসীম ভালোবাসায়,
বিজলিছটার মতো পুরো অন্তরীক্ষে ব্রক্ষাণ্ডে
এঁকে দিই আমাদের শাশ্বত পদছাপ।

যাযাবর দুঃখ আর বেদুইন কষ্ট ভুলে
এখন আমাদের নিমগ্ন হওয়ার সময়
অনন্ত অসীমে প্রণয়ে মমতায় মায়ায় অনুরাগে-
এসো এবার ডুব দিই অবিনশ্বর প্রেমে।

 

 

প্রকৃতি ও নারী

রেবেকা ইসলাম

বৃষ্টিতে ভিজে গেল পুরো রাত,
চুপসে গেল সব শব্দ,
হারিয়ে গেল নবনীর চাঁদ।
ভেজা শরীরের আগুনরূপে পাগল হয়ে ওঠে
গাঁয়ের একমাত্র নদী।

পোয়াতি নদীর গর্ভ ফুলে ফেঁপে ওঠে,
ফুঁসে ওঠে অবিরত,
তীরভাঙার চলে মুহূর্মুহু খেলা
এক অবিশ্বাস্য উল্লম্ফন!

ওদিকে ভোরের শুকতারাকে
দুচোখ ডুবিয়ে দেখার ইচ্ছেপূরণের ঘর
আজও শূন্য পড়ে আছে।
মেয়েটার আনন্দুআকাশ বিক্রি হয়ে যায়;
সর্ষেবাটার গন্ধমাখা আঁচল ফেলে
বকুলতলায় এলিয়ে পড়ে বাদামি শরীর।

ভোরের ধূসর আলো লেপ্টে থাকে
তার দুহাতের মুঠোয়, খোলা পিঠে
প্রকৃতি ও নারী, এক হয়ে যায়।

 

মন খারাপের দিনে

যাইদ আল মারুফ

মন খারাপের দিনে
ওই মনের আস্তিনে, লুকিয়ে তুমি রেখ।
মাথাটাও কোলে নিয়ে, এলোচুল টেনে দিয়ে
হাসিতে ফের দেখ।

নদীর অকূলে হলে
সেথার অশ্রু জলে, প্রবাহে ভেসে এসো।
অজানা কোন মহলে, নিরন্তর দখলে
নিরবে ভালোবেসো।

আয়নাতে যদি দেখ
ক্লান্তিতে হাসি মেখো, দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
আমরণ পাখি হয়ে, বিরহ যাতনা সয়ে
হাসিও ছোঁয়া পেলে।

 

 

হেমন্তের মনোরোগ

ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়

হেমন্তের নকশায় মিশে গেছে
তোমার সুদীর্ঘ শরীর।
তোমার জানালার ওপাশেই
কংক্রিটের আধুনিক শহর;
চাপা পড়ে নতুন ফসলের ঘ্রাণ,
মাটির চুলায় ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সুবাস।
কর্পোরেট জীবনে ও হেমন্ত আসে;
সেন্ট্রাল এসির শীতল হাওয়া,
আধুনিক নাগরিক জীবনে অপ্রাকৃত
শস্যদের বুদবুদ অবিশ্রান্ত নগরে কথা বলে।
অথচ তোমার মুখ হেমন্তের নরম রোদের মতো
সেদিনের পর আজো এমনই লাগে তোমাকে
যতই তুমি টের না পাও হেমন্তকালের বিকেলে,
প্রেমিকের মুমূর্ষু হাহাকারে মরে যাওয়া রোদ।
ফসলের অ-সুখে বেড়ে যাচ্ছে ব্লাড সুগার,
প্রেসক্রিপশনের বিল, এনেস্থিসিয়ার যন্ত্রণা,
হেমন্তের মনোরোগ ইত্যাদি ।

 

 

শূন্য থাকা সমীচীন

সাজ্জাদ সাদিক

আকাশ থেকে বহু নক্ষত্র খসে পড়েছে,
পাতা, ফুল কালে কালে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ছে হেমন্ত।
শহরের অলি-গলি সব ছেয়ে গেছে হারানো বিজ্ঞপ্তিতে,
প্রত্যাশার ফিরিস্তি বোধ হয় শূন্য থাকা সমীচীন ।
ভীষণ ভালো আছি যে এখন আকাশের চাঁদ না চেয়ে
বরং নিজেকে তুষ্ট রেখে জ্যোৎস্নায় কিংবা আঁধারে ।

সেইটুকু জ্যোৎস্না পেলে রাত চলে যায় অন্য রাতে
সেইটুকু অমাবস্যায় রাত পড়ে থাকে না অন্ধ রাতে
সময়ের নিয়মে সময় হেঁটে যায়
শিশিরভেজা ঘাস পিষে, কুয়াশার ঘোর ঝাপসা মাড়িয়ে,
আমিও ভেসে যাই সময়স্রোতে সমানুপাতে ।