কবিতা

প্রেমিকের জন্য কয়েকটি পঙক্তি

আরিফুল হাসান

কোথায় সাহারা? আমি আমার আজন্ম অন্ধত্বকে বয়ে
বেড়াচ্ছি নিরঙ্কুশ পাথরের দেশে। আর ক্যাকটাস
আমার পা বিদ্ধ করলে আমি লুকিয়ে গিয়েছি যন্ত্রণা
আর পর্বত আমার পথের দেয়াল হয়ে এলে আমি তাকে
উপড়ে ফেলেছি অবলীলায় অতিক্ষুদ্র পালকের মতো।
কোথায় জীবন আর কোথায় মরণ? যাপনের শেষচিহ্ন
দেখে যে পৃথিবীর প্রতি মায়া উঠে গেছে, যে
ভালোবাসার প্রতি জেগে উঠেছে সুতীব্র ঘৃণা তবুও
বারবার সে পৃথিবীতে, সে ভালোবাসার কাছে অঞ্জলি
পেতেছি দীনহীন ভিখারির মতো শীর্ণ-জীর্ণ একাকার।
কোথায় ভালোবাসা আর কোথায় বলো প্রেম? দেখেছি
কী সুখ তোমার বুকের ভেতরে এঁকে গেছে নীল স্বাপ্নিক
চোখ; দেখেছি, কী চোখে তোমার বিষ ঝরে পড়ে মূর্ত
বিভায় আর কী শোকে তুমি কাতর হয়েছো দেখেছি।
ওহে অন্ধকার, তোমার মুখোমুখি আজ দাঁড়িয়েছে ঝড়।
কোথায় প্রেমিকা আমার? যে ঘুম ফাগুনকে প্রত্যাখ্যান
করে, যে ঘুম একটি পলাশের বনে আগুন ধরিয়ে দেয়;
সেই ব্যথা, সেই বিষতীর আমি বুকে বয়ে এনেছি এবার;
এবার তোমার মুখ লুকাও সুপ্রিয়া। প্রেম জানে,
বিচারিক সভায় প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড হয় অন্তত অসংখ্যবার।

 

 

ভেঙে পড়ে

অনন্য কাওছার

পত্রালি, গাছেও জেগে আছে বুকের ক্ষত
ভেঙে পড়ে গাছ আর সবকটি ডালপালা
শিকড়সমেত উপড়ে নেওয়া সৈকতও
সানন্দে পান করে মৃত্যুর পেয়ালা।
শাশ্বত চোখাচোখি
সম্মুখে রেখে এই বিশাল সমুদ্র
এসো মুখোমুখি বসি,
শেষ দেখার পর কতদিন চলে গেল!
কতকাল গত হলো!
সমুদ্রস্নানে ভেজা চুল, চুলের গোছা থেকে
গড়িয়ে পড়া শেষ বিন্দু জল, আঙুলের দুষ্টুমিষ্টি
ছোঁয়াছুঁয়ি আর খুনসুটিগুলো
শুটকির মতো ঝুলে আছে শুষ্কতায় !
এসো, যদি ফিরে পাওয়া যায়
বালুতটে বিলীন হওয়া পদচিহ্নগুলো,
বিহঙ্গমন ঘ্রাণ শুঁকে যদি বলে দিতে পারে
সমুদ্রের নোনাজলে ধুয়ে গেছে সবকিছু
বাকি শুধু এই শাশ্বত চোখাচোখি ।

 

অতীতের স্মৃতি

ফারজানা ইয়াসমিন

দীর্ঘনিঃশ্বাস চাপা পড়ে আছে হৃদপিণ্ডের নিচে,
রক্তের সাথে মিশে গেছে হাজার বছরের বিষন্নতা।
কোলাহলে কান্নার শব্দ মিলিয়ে গেছে চিরতরে,
বৃষ্টির জলে একাকার অশ্রু সিক্ত চোখের কাজল।
মুক্ত পাখির ডানায় শিকলপরা মন,
পাহাড়ের বুকে খোদাই করা নিখুঁত অন্তরের মানচিত্র। সাগরের লোনাজল রেখে যায় অতীতের স্মৃতি,
সৈকতের বুকে নিষ্ঠুর কালের সাক্ষী করে যেতে।
হৃদয় গহীনে প্রলয় চলে আলো-আঁধারির মাঝে,
কথারা আজ জমাট বেঁধে শিলাস্তরে পরিণত হয়েছে।

 

 

আত্মঘাতী

নুশরাত রুমু

দূরবীণ দূরত্বে চলে গেছি সেই কবে,
তবু ধূসর চোখের উষ্ণ স্পন্দন টের পাই এখনও…
স্থলিত চুলের গুচ্ছ আছড়ে পড়ে নিঃসঙ্গতায়,
বলিষ্ঠ কামনারা স্নায়ুতন্ত্রে ঢেউ খেলে সযত্নে।
চৈতালি সন্ধ্যায় আজও উতাল হাওয়া বয়,
জোনাকির ক্ষীণ আলোয় বুকের হাহাকার মুচড়ে ওঠে
নিরেট অন্ধকারে কান্নারা দলা পাকিয়ে আসে।
তখন আকণ্ঠ ডুবে ছিলাম তোমার স্বপ্ন গায়ে মেখে,
ক্রুর হাসিতে আজ ব্যঙ্গ করে যায় আত্মঘাতী প্রবৃত্তি,
ভালোবাসা সেখানে নিতান্তই এক পোশাকী আবরণ মাত্র।