শরৎকাল
রেজাউল করিম
এলো শরৎকাল…
কৃষ্ণ, শ্বেতশুভ্র, গাঢ় নীল ও ধূসর রঙের বৈচিত্র্যময়
মেঘ আকাশে ওড়ে শঙ্খচিলের মতো।
মিঠেকড়া রোদে ভ্যাপসা গরমে
বিদ্রোহী হয়ে ওঠে শরীর কখনো।
হঠাৎ বৃষ্টির আভাস। হিম বাতাস।
শান্তির ফল্গুধারা বয়ে যায়।
জলাভূমিতে জলজ শস্যেরা করে কিলবিল।
তেপান্তরে সবুজ ধানখেতে চোখ জুড়ায়, মন বিভোল।
দূর্বাঘাস শিশিরের অপেক্ষায় দিন গোনে প্রেয়সীর মতো।
পুবাকাশে ধূসর মেঘের আড়ালে রঙধনু
ষোড়শী যুবতীর মতো উঁকিঝুঁকি মারে,
রোমাঞ্চিত মন কী ব্যাকুল।
শারদ পূর্ণিমার রাতে চাঁদের আলোয় আজও
সমুজ্জ্বল কাজী নজরুল…
বৈচিত্রের রঙ ছিটায় শরৎ…
পাড়ার মোড়ে ভাদ্রের কুকুরের
শরীরজুড়ে এ কী প্রণয়ের হুঙ্কার!
কাশ হেলিয়া দুলিয়া রঙ ছিটায় ভালোবাসার…
শরৎ ও শিউলি যেন এক প্রাণিত
যুগল জুটি আবহমান বাংলার—
বিলে-ঝিলে-নদীর কিনারে কিনারে
আগুন আর ভালোবাসা যেন একাকার।
তারুণ্যের হৃদয়ে জাগে এ কী প্রাণসঞ্চার—
এলো শরৎকাল…বৈচিত্র্যময় বাংলার।
সময় চলে যায় পুনর্পাঠে
বজলুর রশীদ
মব দেখে উড়ে যায় দিনের আলো-
আমি তখন গল্পের সত্যটা না বলে,
ঘরে থাকি উপুড় হওয়া অন্ধকারে,
জ্যোৎস্নার গলা টিপে ধরে
ভাতঘুমে শুয়ে থাকা ফানুস…
লোভ মনের ভূগোলে বড়ই অন্ধকার-
অকারণে ঝরায় অকাল শ্রাবণ,
প্রেমিকহারা শোকের খবর বলতে বলতে
অজস্র সম্পর্ক মরে যায় ভালোবাসার প্রযন্তে।
অতঃপর, সময় চলে যায় পুনর্পাঠে…
হেঁটে চলা নিত্য দিনের মিছিলে
আর কাউকে বলা হয় না
দৃশ্যগুলো শুধু বিভ্রান্তির সূত্রপাতে…
বিপন্ন বৃষ্টি
আরিফুল হাসান
একফোঁটা বৃষ্টি নেই
নদীজলে তবুও বিপন্ন মানুষ
ভেসে যায় অদেখার হ্রদে
চিন্ময় মৃন্ময় মানুষ এমনই বেহালে
বেনোজলে ভেসে যেতে যেতে
বৃষ্টিহীন বিরহী মানুষ
কাতরায়
সাতার কাটে
চোখের জলে।
কোথাও শরতও নেই
সব যেন খা খা
তবু উথলায় সাগরের ঢেউ
ফণা তোলে স্রোতের আস্ফাল
যেন বা মানুষ তার নিজের আগুনে
গলে যেতে যেতে
তরলে গরল হয়ে মিশে যেতে যেতে
সাগরেরও উচ্চতা বাড়ায়
বৃষ্টিহীনতায়।
তাহলে মানুষ,
কোথায় পাবে তার ঠাঁই
কখনও বিপন্ন মানুষ
অবাক ও অস্থির
শ্বাসনালী যেন
ছিড়ে গেছে কবে
হা হা রবে তবু
মেঘ ডাকে ব্যর্থ মেঘ
ঘন দেয়া
তবু বৃষ্টি নামে না
কী ভীষণ যন্ত্রণা
চোখ ভিজছে
মন ভিজছে না।
তৃষ্ণা
প্রণব মজুমদার
আষাঢ়ের বারিধারা তাও আবার মুষলধারে
মনে শিহরণ স্মৃতিরা পেখম মেলে স্বচ্ছজলে;
প্রচণ্ড তাপে আমারও তাপে জলতৃষ্ণা থাকে।
শ্রমে ক্লান্ত দাবদাহে শ্রান্ত হয় লবনাক্ত শরীর
ক্ষুধার্র্ত শিশুরা মাতৃদুগ্ধ জলে তৃষ্ণা মেটায়
শিশুর স্তন্যপান দেখে বৃক্ষেরও তৃষ্ণা জাগে
গাছের আত্মজা পাতা, আর নড়ে না তখন।
আলোময় বর্ষায় গোচরে ওরা রক্ততৃষ্ণায় মত্ত
পাথরে পাথরে থেতলে দিয়েছে নাঙ্গা তনু
বৃষ্টির শরীর মেখেছে হায়না রক্তাক্ত লাশে
রক্তস্ত্রোত গড়িয়ে নামে দূষিত বুড়িগঙ্গায়
নির্মম নিধনে আমার বৃষ্টিতৃষ্ণা বড় বেমানান!