কবিতা

ক্ষয়িষ্ণু ইতিহাস

সাঈদুল আরেফীন

এক পশলা বৃষ্টিভেজা বিকেল হাতের মুঠোয়
ছায়ামুখ ভাসে দূর-দূরান্ত পেরিয়ে
ঘর্মাক্ত দিনমান সুন্দরের বাতাবরণ আশ্বাস দেয় প্রশান্তির
মন মননের খেলা অদ্ভূত বিস্ময়ে মাতে
এক টুকরো সহাস্য কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে দেয় জীবন্ত সুখের আস্বাদ
তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে অবলীলায়;
ক্লান্তিহীন পথরেখা ধরে ধরে শ্রাবণের চৌকাঠ পেরিয়ে
ভাঙনের শব্দ শুনি
রক্তের সুধা গন্ধ বেয়ে বেয়ে
এগোই, আবার পিছুটান দিই
এক আকাশ অমানিশার আধারে শত প্রশ্ন চোখের কোণে রেখে
খুঁজি জোছনার আলো, বাদামি বিকেল, সমুদ্রপাড় আর
এই নগরে আমি আজ ম্রিয়মাণ কোনো পথিক,
কোনো একদিন, কেবলই একদিন অলিগলি পথ খুঁজে নেয়ার
আশায় বুক বাঁধতে থাকি-ঘুম ভাঙলেই দেখি
হাজার বছরের পরেও ধুলোবালি মাখা জনপদ
ক্ষয়িষ্ণু ইতিহাসের পাদপীঠ।

মোহের বিজয়

নুরুল ইসলাম বাবুল

মায়াভরা এ সংসার, গৃহের আসবাব
প্রতিদিন আলিঙ্গনে ভরে দেয় মন
পৃথিবীর কোলাহলে মাতে গৃহকোণ
জোছনার মতোন নামে মায়াবী খোয়াব।

চারিপাশে পরিজন, মুখর সময়
তবু কেন ফাঁকা লাগে বুকের পাঁজর
পূর্বাহ্ন পেরিয়ে গেছে নেমেছে আছর
ঘুমের আগেই হোক মোহের বিজয়।

 

ইচ্ছেটা

যাইদ আল মারুফ

তোমায় পাওয়ার ইচ্ছেটা হোক তেমন
যেমন করে ইচ্ছে জাগে সবার
এই যে অন্ধ লোকে আলো দেখার
উষ্ণ মরুর গাছটি একটু বৃষ্টির
স্রোতে হারা মাঝি তীরে ফেরার।।

তোমায় পাওয়ার ইচ্ছেটা হোক তেমন
যেমন করে ইচ্ছে জাগে সবার
এই যে বোবা লোকে কথা বলার
ডানা ভাঙা পাখির একটু ওড়ার
আটকে থাকা জল গড়িয়ে পড়ার।।

তোমায় পাওয়ার ইচ্ছেটা হোক তেমন
যেমন করে ইচ্ছে জাগে সবার
এই যে পঙ্গু লোকে পায়ে হাটার
শুষ্ক ঝিলের পুঁটি নদী সাঁতরার
ঝরে যাওয়া পত্রে আয়ু খোঁজার।।

 

ঈশ্বর আর আলো দেখতে একই

দ্বীপ সরকার

একটা সকাল পেলে
আর কিছু চাওয়া থাকে না আমার
সকালটা পাবো কি না, রাত্রিকে বলেছিলাম
রাত্রি তখন ঈশ্বরকে ডাকে-

ঈশ্বর আর আলো দেখতে একই
ঈশ্বর পেলে, আলো লাগে না
অথবা আলো পেলে ঈশ্বরকে

রাত্রিগুলো পাথরের মতো স্থির
কিন্তু আলোরা অস্থির
আলো বাড়লে, সকাল
আরও একটু বাড়লে, দুপুর
তারপর, বিকেল-সন্ধ্যা
অথচ, ঈশ্বর অপরিবর্তিত

ঈশ্বর রাত্রিকে বলেছিলেন-
‘সকাল হয়তো আসবে
মানুষগুলো আলোকিত হবে না’

 

 

অনুবাদ কবিতা

মূল : জোহান ভোল্ফগাং ফন গ্যেটে
অনুবাদ : মুহাম্মদ আস্রাফুল আলম সোহেল

উদীয়মান পূর্ণিমা চাঁদের দিকে

তুমি কি হঠাৎ তোমাকে আড়াল করে ফেলবে,
এ মুহূর্তে কে এতো কাছে ছিলো?
ভারী উদীয়মান মেঘরাশি তোমাকে ঘিরে রেখেছে ।
তুমি আমার দৃষ্টির আড়ালে আছো ।
তবুও আমার দুঃখ তুমি ভালো করেই জানো,
নক্ষত্রের মতো মিষ্টি করে ঝলমল করছে!
আমি যে ভালোবাসি, এ তুমিই দেখাচ্ছো,
যদিও আমার প্রিয়জন হয়তো দূরে ।
তাহলে ওপরের দিকে ওঠো! পরিষ্কার, নমনীয়,
জাঁকজমকে অনেক বেশি উজ্জ্বল!
যদিও আমার হৃদয় বিষাদে প্রচণ্ড কেঁপে ওঠে,
পরমানন্দে পরিপূর্ণ রাত!

মধ্যরাতের প্রহরে

মধ্যরাতের প্রহরে আমি গিয়েছিলাম, স্বেচ্ছায় নয়,
ছোট্ট একটি ছেলে, সমাধিক্ষেত্রের পাশ দিয়ে,
যাজক ভিকারের বাড়িতে; আকাশের নক্ষত্রগুলো
চারদিকে তাদের সুন্দর দীপ্তি ছড়িয়ে আছে,
মধ্যরাতের প্রহরে ।
এবং যখন, জীবনের পথে যাত্রা করতে করতে,
আমার ভালোবাসা আমি অনুসরণ করেছিলাম,
যতোক্ষণ সে এগিয়ে যাচ্ছিলো,
মাথার উপর নক্ষত্র এবং সুমেরু প্রভা দ্বন্দ্বে লিপ্ত,
যাওয়া এবং আসা, আমি প্রমাণ করেছি নিখুঁত স্বর্গীয় আনন্দ
মধ্যরাতের প্রহরে ।
পূর্ণিমা পর্যন্ত, দীপ্তিতে পরিপূর্ণ,
যেখানে সে সমাহিত ছিলো সেই
অন্ধকার ভেদ করে ঝলক বেরিয়ে আসে;
এবং তারপর সম্মত, সক্রিয়, দ্রুত চিন্তাভাবনা
অতীতকে ঘিরে, যেনো ভবিষ্যতের চারপাশে জড়িয়ে আছে,
মধ্যরাতের প্রহরে ।