কবিতা

বোধিবৃক্ষ

জাহাঙ্গীর আজাদ

অযুতবর্ষী দীঘির পাড়ে বয়সী সেই বটবৃক্ষের দীর্ঘ ঝুড়ি।
এক জীবনে কয়শো ঘুঘুর শান্ত দুপুর যাপন হলো
কতো অযুত শ্রান্ত পথিক জিরিয়ে নিলো শ্যামল ছায়ায়
কাকচক্ষু স্বচ্ছ জলে নিজের শ্যামল মুখটি দেখে উদাস হলো
কোন্ গেরামের কোন্ নাইওরী,
হিসেব রাখে বয়সী সেই বটবৃক্ষের দীর্ঘ ঝুড়ি।

পূর্বপাড়ের একটু পূবে ঘোষের পাড়ার শরৎ কাকা
মুখটি পথের পাঁচালীর সে মোটু ময়রার ভাইটি যেন
ছানার বড়া, রসগোল্লা, প্যারা সন্দেশ তিলের গজা
কোনটা বেশি স্বাদের ছিলো? সস্তাগন্ডার সেই বাজারে
সেই সময়ের চারটে পয়সার মূল্য কতো কেউ কি জানো?
জানে কি সেই চাঁদের বুড়ি?
হিসেব রাখে অযুতবর্ষী দীঘির পাড়ের
বয়সী সেই বটবৃক্ষের দীর্ঘ ঝুড়ি।

একটু দূরে কৈলাশ সওদাগরের বাড়ির
চতুর্দশীর মেলার সাঁঝে
কোন্ কিশোরীর লাল বেগুনি কাচের চুড়ির
ভাঙার শব্দে যে কিশোরের মন ভেঙেছে শব্দবিহীন
নামটি যে তার হারিয়ে গেছে শিমুল তুলোর হাওয়ায় ভেসে
কেউ কি জানে? জলের তলার বিষাদ মেখে
ঘুমিয়ে থাকে শ্যাওলা পড়া কয়টি পাথর, কয়টি নুড়ি?
হিসেব রাখে অযুতবর্ষী দীঘির পাড়ে বয়েসী সেই
বটবৃক্ষের দীর্ঘ ঝুড়ি।

 

ব্রোথেল

সৈয়দ শরীফ

স্বপ্নের বালুচরে শকুনের আড্ডা;
আঁখিদ্বয় উস্কানি দিচ্ছে সমুদ্রকে
গর্জনে তার কথ্যধ্বনি,
সমগ্র পৃথিবী নাকি ঝুলে পড়েছে শেয়ালের লেজে।

বিবর্তন সংবাদ ছেপেছে
‘ডালিম গাছে তৈরি হবে তিনটি ব্রোথেল’
একটি তার-আরেকটি তাদের-
আরেকটিকে আপাতত অপ্রয়োজনীয় মনে হলো।
আচ্ছা,
ওগুলো মানুষ নয়তো?
পাগলদের তো কোনো ব্রোথেল প্রয়োজন হয় না।

 

জলের শরীরে ঠোঁটের ইতিবৃত্ত

বশির আহমেদ

চুরুটের বিষাক্ত ধোঁয়ায় মিশে যায় মলয় বাতাস,
খাঁচাবন্দি পাখি স্বপ্ন দেখে আকাশে ওড়ার।
বিবর্ণ সন্ধ্যার আলোয় সঙ্গমে
মেতে ওঠে কার্তিকের শিশির।
বুড়িগঙ্গার ওপারে বুনোফুলের বাসর!
কলুই ক্ষেতে ফুটে ওঠে যুগলবন্দী ঘুঘুর হানিমুন।
বিনয়ী রোদের ঘ্রাণ শুঁকে ডানা মেলে ধূসর গাঙচিল,
জলের শরীরে মিশে আছে মাছরাঙার সুচালো
ঠোঁটের ইতিবৃত্ত!

আত্মহনন

আরফান হাবিব

শেষ চুমুটা দিবো
তোমার বিস্ময় তিলে
সাঁতার না জানা আমি
ডুবে যাবো তোমার
অগভীর ঝিলে
চাইলে রুখে দিতে পারো
এ আত্মহনন
একটাই দাবি
তোমাকেই প্রয়োজন।

 

প্রিয় বিকেল

রেবেকা ইসলাম

জানালা খুলতেই মন পালাতে চায়
কার্নিশে হালকা রোদের খুনসুটিছবি
আর রোদপোড়া দুপুরের অতীত রেশ,
মেঘের ভেতর মেঘের ভিড়
শীতের আগমনীবার্তা জুড়ে
শুধু মন খারাপের ধূসর রঙ,
শোনা যায় বুকের ভেতর ঝরাপাতার শব্দ
খুব চেনা খসখসে, তীব্র শূন্য
মনে পড়ে তার চুলের ভাঁজের গল্প
কখনো সোজা, কখনো আঁকাবাঁকা
হঠাৎ এলোমেলো করার হুল্লোড়
আনন্দ আর ঘ্রাণের বৈভব,
প্রিয় এই বিকেল ভাঁজ হতেই থাকে
ছোট থেকে ছোট, আরো ছোট
অন্ধকারের গ্রাসে।