দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার »
কক্সবাজারের ইলিশ যাচ্ছে কলকাতায়। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের চাহিদা বেড়ে গেছে এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা। যার কারণে সেখানকার ব্যবসায়ীরা গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি ব্যাপকভাবে শুরু করেছেন। জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও অন্যত্র যাওয়ার কারণে কক্সবাজারে ইলিশের বাজার এখন বেশ চড়া।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ফিশারিঘাটে এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রায় ১২শ-১৩শ টাকা কেজি দরে, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা দরে এবং ৫শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, গত কয়েকদিন ধরেই কক্সবাজারে ইলিশের বাজার বেশ চড়া। প্রতিটি সাইজের ইলিশেরই দাম আগের তুলনায় কেজিপ্রতি ২শ থেকে ৩শ টাকা হারে বেড়েছে।
তিনি জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে কক্সবাজারের ইলিশ যাচ্ছে ঢাকা হয়ে কলকাতা। শুক্রবারও ফিশারিঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে ছোট-বড় চারটি ট্রাকে প্রায় ২৭ মেট্রিক টন ইলিশ। সেখান থেকে বাছাই করে বড় ইলিশগুলো কলকাতায় পাঠানো হয়। আর ছোট ইলিশগুলো বিক্রি করা হয় রাজধানীর বাজারে। জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। যার কারণে জেলেরাও খুশি। কয়েকদিন পর আবারও ২২ দিনের জন্য সাগরে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এখন জালে মাছ ধরা না পড়লে তখন জেলে পরিবারগুলোতে জীবিকা নির্বাহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটস্থ বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপক মো. এহসানুল হক বলেন, ‘ট্রলারগুলো সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফেরার ওপর ভিত্তি করে মাছের গড় পরিমাণে বেশ হেরফের হয়। তবে ইলিশের বাজার চড়া থাকায় আগামী কয়েকদিন বেশি সংখ্যায় ট্রলার ঘাটে আসা-যাওয়া করবে এবং আরো বেশি সংখ্যক ইলিশও বাজারে আসবে বলে আশা করছি।’
ফিশারিঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে ইলিশ ধরার মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন ১শ’ থেকে দেড়শ’ মেট্রিক টন ইলিশ আসে। আর মন্দা মৌসুমে আসে ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন ইলিশ। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত দুই মাসের মধ্যে দেড় মাসও সাগরে মাছ ধরতে পারেননি কক্সবাজারের জেলেরা।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, আগস্ট-সেপ্টেম্বর দুই-দেড় মাসে সাগরে চারবার লঘুচাপ তৈরি হয়। এ কারণে বার বার মাছ ধরতে গিয়েও মাছ না ধরেই ফিরে আসতে হয় জেলেদের। সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর সতর্ক সংকেত প্রত্যাহারের পর থেকে সাগরে মাছ ধরতে যায় জেলেরা। আর গত কয়েকদিন ধরে মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরতে শুরু করে। এখন অনেক ট্রলার সাগরে আছে। তারাও কয়েকদিনের মধ্যে ফিরে আসবে।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির বদ্দার আবদুর রহিম ও সৈয়দ জানান, কক্সবাজারে ছোট-বড় প্রায় ৮ হাজার নৌযান আছে। যারমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। বোটগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে। এ কারণে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালে ইলিশ ব্যতীত ছোট আকারের প্রায় পাঁচ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।
ট্রলার মাঝি আবু বক্কর বলেন, আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ২২ দিন সাগরে মাছ আহরণ বন্ধ হয়ে যাবে। ডিম পাড়ার মৌসুমকে কেন্দ্র করে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। তখন আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে কষ্ট হবে। এখন জালে মাছ পড়ছে বলে আমরা ভালো আছি। নয়তো কষ্টের সীমা থাকত না।