ওষুধের বাজার, দাম ও ভেজাল নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে

ওষুধের বাজারে যেন তুঘলকি কাণ্ড চলছে। একদিকে ভেজাল, মানহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল ওষুধের ছড়াছড়ি অন্যদিকে যার যেমন ইচ্ছা দাম আদায়ের প্রতিযোগিতা। মনে হয় এসব দেখার কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।
সুপ্রভাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাগামহীনভাবে বাড়ছে ওষুধের দাম। নানা দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জেনেরিকের (একই উপাদানসম্পন্ন বিভিন্ন কোম্পানির) ওষুধ। নগরের হাজারিগলি, জিইসি মোড়সহ বিভিন্নস্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, ওষুধের দোকানে বিভিন্ন জেনেরিকের ওষুধ কোম্পানিভেদে বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন দামে।
বর্তমানে অস্টিওপোরোসিসের রোগের প্রভাব বাড়ছে। এ রোগের আইব্যান্ড্রনিক এসিড বিসপসফোনেট জেনেরিকের ওষুধের বেশ চাহিদা রয়েছে। যা বাজারে ১৬ থেকে ২০টি কোম্পানি বাজারজাত করছে। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলো তৈরি করছে ১৫০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট। যা বিক্রি হতো প্রতি ট্যাবলেট ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। বর্তমানে তা বেড়ে তিনগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে লাবাইড ফার্মার বোনাইড প্রতি ট্যাবলেট কিড ১ হাজার ৫০০, ওরিয়ন ফার্মার বনকেয়ার ১ হাজার ২০০, হেলথকেয়ার ফার্মার বন্ড্রাভা চারগুণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯৬০ টাকা। আবার রেডিয়েন্ট ফার্মার বনোভা ৫ গুণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০৭ টাকা।
অ্যান্টিবায়োটিক সেফট্রিয়াক্সন, সেফিক্সিম, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, অ্যামিক্সোসিলিন জেনেরিকের ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও সিরাপ ফরম্যাটে রয়েছে শতাধিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের। ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলগুলোর কোনোটি ৫০০ মিলিগ্রাম আবার কোনোটি ২০০ বা ২৫০ মিলিগ্রাম। এসব জেনেরিকের ওষুধগুলোর দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কোম্পানিভেদে রয়েছে দামের পার্থক্য।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘আসলে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কোম্পানিরা। আমরা অর্ডার দেওয়ার পর বাজারে ওষুধ আসলে তখন জানতে পারি ওষুধের দাম বাড়ছে।’
বাজারজাতকরণের সাথে জড়িতরা বলেন, ‘বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে দেশীয় বাজারে এখনও ওষুধের দাম তেমন বাড়েনি। তবে ওষুধ তৈরিতে যেসব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হয় প্রায় আসে আমদানির মাধ্যমে। গতবছর থেকে দেশে ডলার সংকট, এলসি খরচ বৃদ্ধি, রাসায়নিক দ্রব্যের সংকটের কারণে দাম বেড়েছে।’
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. কাইয়ূম সুপ্রভাত প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ওষুধ কিনতে গিয়ে যে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছে তা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমার করার কিছু নেই। ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় ঢাকা অফিস থেকে। দামের বিষয়টি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় দেখবে।’
যৌক্তিক কারণে দাম বাড়লে সেটি আলাদা কথা কিন্তু যার যেমন দাম আদায়ের প্রতিযোগিতা তো বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ভেজাল, নকল মানহীন ওষুধ বিক্রি। মানুষ একদিকে বেশি দাম দেবে অন্যদিকে নকল ওষুধ কিনে প্রতারিত হবে তা কী করে হয়। এই তুঘলকি কাণ্ড বন্ধ করতে হবে।