সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিদায়ের শঙ্কাও তো চোখ রাঙাচ্ছিল। ওমানের কাছে হারলেই যে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লজ্জায় ডুবতে হবে। সব মিলিয়ে চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে নামা বাঁচা-মরার লড়াইয়ে উতরে গেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ওমানকে ২৬ রানের হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিকে থাকলো মাহমুদউল্লাহরা।
মঙ্গলবার ওমানের আল আমিরাত স্টেডিয়ামে জয়ের এই ব্যবধানে অবশ্য বোঝা যাবে না কতটা চাপে ও অস্বস্তিতে ছিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানের জোড়া আঘাতের আগে উল্টো ওমানই চাপে রেখেছিল। যদিও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে আটকে দিয়েছে ওমানকে। ২০ ওভারে বাংলাদেশের করা ১৫৩ রানের জবাবে ওমান ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে করতে পারে ১২৭ রান।
বাংলাদেশ জিতলেও ‘বি’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানেই রয়েছে। দুই ম্যাচে ২ পয়েন্ট (+০.৫০) মাহমুদউল্লাহদের। সমান ম্যাচে ওমানের পয়েন্টও ২। তবে নেট রানরেটে এগিয়ে ওমান (+০.৬১৩)। আর এই গ্রুপে টানা দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে স্কটল্যান্ড। অন্যদিকে তিন ম্যাচে কোনও পয়েন্ট না পেয়ে পাপুয়া নিউগিনির বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে।
১২ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ জমিয়ে রেখেছিল ওমান। বলা ভালো, জয়ের পাল্লা তাদের দিকেই ছিল হেলে। ১২.৫ ওভারে তাদের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ৯০ রান। এরপরই শুরু সাকিব ও মোস্তাফিজের দাপট। তাদের সামনে পরের ব্যাটসম্যানদের শুধু আসা-যাওয়া। বিশেষ করে, যতীন্দর সিংয়ের বিদায়ের পর ধসে পড়ে ওমানের ব্যাটিং লাইনআপ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার মোস্তাফিজ। ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে তার শিকার ৪ উইকেট। আর ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা সাকিব ৪ ওভারে ২৮ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শেখ মেহেদী হাসান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে জিততেই হবে। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ওমানকে ১৫৪ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। স্কোরটা খুব একটা বড় করতে না পারায় বোলিংয়ে দারুণ শুরুর প্রয়োজন ছিল। সেই শুরুটাই এনে দিলেন মোস্তাফিজ। এই পেসার বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন প্রথম উইকেট।
বল হাতে তুলে নিয়ে প্রথম ডেলিভারি ওয়াইড দিলেন মোস্তাফিজ।তবে দ্বিতীয় ডেলিভারি, মানে প্রথম সঠিক ডেলিভারিতেই উইকেট তুলে নিলেন বাঁহাতি পেসার। আকিব ইলিয়াসকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান। এই ব্যাটার রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। ৬ বলে ৬ রান করে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে।
মোস্তাফিজের উইকেট উৎসব চলমান ছিল। যদিও মাঝে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ মিসে হতাশ হতে হয়। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে যতীন্দর সিংকে ফেরাতে পারতো বাংলাদেশ। মোস্তাফিজের স্লোয়ারে বিগ হিট খেলতে চেয়েছিলেন ওমান ব্যাটার। কিন্তু বল তার ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে উঠে যায়। পিচের কাছাকাছি জায়গায় অনেক উঁচুতে উঠেছিল বল। ক্যাচ নেওয়ার সুযোগ ছিল অন্তত তিনজনের। যদিও মাহমুদউল্লাহ নিজেই দায়িত্ব নিতে চাইলেন, কিন্তু পারলেন না। ছাড়লেন ক্যাচ।
তবে ওই ওভারের চতুর্থ বলেই উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজ। যদিও যতীন্দরের নয়, বাঁহাতি পেসার তুলে নেন কাশ্যপ প্রজাপতির উইকেট। উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে ধরা পড়ার প্রজাপতি ১৮ বলে ১ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় করেন ২১ রান।
এরপর চলেছে ওমানের দাপ। তাই প্রয়োজন ছিল একটি ব্রেক থ্রুর। শেখ মেহেদী হাসানের সৌজন্যে সেটি পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে তার উইকেট উদযাপনে আছে মোস্তাফিজুর রহমানের দারুণ ভূমিকা। এই পেসারের চমৎকার ক্যাচে বিদায় নিয়েছেন ওমান অধিনায়ক জিসান মাকসুদ।
মাকসুদকে খুব বেশি বাড়তে দেননি মেহেদী। এমনিতেই একটু চাপে ছিলেন ওমান অধিনায়ক। বাংলাদেশি স্পিনারের বলে বাউন্ডারির আশায় শটস খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ডিপ স্কয়ার লেগে মোস্তাফিজের চমৎকার ক্যাচের শিকার হন। ফেরার আগে ১৬ বলে ১২ রান করেন ওমান অধিনায়ক। ১০ রানে ফিরতে পারতেন যতীন্দর সিং। অথচ তিনি যোগ করে গেলেন আরও ৩০ রান। মাহমুদউল্লাহর ‘সৌজন্যে’ দ্বিতীয় জীবন পেয়ে ওমানকে এগিয়ে নেওয়া এই ব্যাটারকে অবশেষে থামালেন সাকিব আল হাসান। এই স্পিনারের বলে ৪০ রান করে ফিরেছেন যতীন্দর। বোলিংয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না সাকিব। তবে ওমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটিই নিয়েছেন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমানের বলে বেঁচে যাওয়া যতীন্দর একটু একটু করে বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন দলের রান। চাপ তৈরি করা এই ব্যাটারকে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়েছেন সাকিব।
ডিপ স্কয়ার লেগে লিটনের হাতে ধরা পড়ার আগে যতীন্দর ৩৩ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় খেলেন ৪০ রানের ইনিংস।
পরের গল্পটাও সাকিবময়। ওমানের টপ অর্ডার ব্যাটারা ভীষণ চাপে রেখেছিল বাংলাদেশকে। ক্যাচ মিস কিংবা উইকেট না আসায় অস্বস্তিতে ছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তবে সাকিবের জোড়া আঘাতে উল্টো ওমানকে এখন চেপে ধরে বাংলাদেশ।
নিজের আগের ওভারে যতীন্দর সিংকে আউট করেছিলেন সাকিব। এরপর তুলে নেন ২ উইকেট। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন তিনি। তা না হলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশ ক্যাম্পে স্বস্তি ফেরান এই স্পিনার। পরপর দুই বলে ফেরান আয়ান খান (৯) ও নাসিম খুশিকে (৪)।
এরপর ওমানের টেল এন্ডারদের বাড়তে দেননি মোস্তাফিজ তিন বলের মধ্যে দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে বাঁহাতি পেসার নিশ্চিত করেন দলের জয়।
এর আগে নাঈম শেখ ও সাকিব আল হাসানের ইনিংস দুটি বাদ দিলে আবারও হতাশার ছবি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। নাঈম হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে খেলেছেন ৬৪ রানের ইনিংস। আর সাকিব করেন ৪২ রান। এ দুজন ছাড়া কেবল মাহমুদউল্লাহই যেতে পেরেছেন দুই অঙ্কের ঘরে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষেও তাই সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। নির্ধারিত ২০ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে করেছে ১৫৩ রান।
দারুণ এক হাফসেঞ্চুরি করে ফিরেছেন নাঈম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ৫০ বলে করেছেন ৬৪ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২ রান সাকিবের। রান আউট হওয়ার আগে ২৯ বলে ৬ বাউন্ডারিতে করেন ৪২ রান। আর শেষ দিকে ১০ বলে ১৭ রান করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। এছাড়া বাকি সবাই ব্যর্থ।