ঐরাবতের শুঁড়ের বড়াই

আশরাফ আলী চারু :

একবনে ছিল এক ঐরাবত। তার যেমন  ছিল স্বাস্থ্য, তেমনি ছিল শক্তি। বনের সকল প্রাণীকে সে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো। সামনে পেলেই শুঁড় দিয়ে ধরে আছড়ে মারতো, আবার কাউকে পায়ে পিষে। কাউকে সে  রেহাই দিত না। শুঁড়ের অহমিকায় সে এমন অত্যচারী হয়ে উঠেছিল যে তার ভয়ে বনের প্রাণীরা কেউ শান্তিতে থাকতে পারতো না। সবারই ভয় আর আতংকে সময় কাটতো। আর ভাবতো, না জানি কখন অত্যাচারী   ঐরাবত সামনে চলে আসে। এমতাবস্থায় বনের নিরীহ প্রাণীরা মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো পশুরাজের কাছে বিচার দিয়ে অহংকারী ঐরাবতকে এমন শায়েস্তা করতে হবে যাতে সে জীবনে আর শুঁড়ের বড়াই করতে না পারে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেয়াল গেল পশুরাজের কাছে। পশুরাজ সব শুনে সৈন্যদের বলে দিল দুদিনের মধ্যে ঐরাবতকে আটক করে আনা চাই। পশুরাজের সিদ্ধান্ত মাথায় নিয়ে সৈন্যরা গেল ঐরাবতকে আটক করতে। কিন্তু সৈন্যরা সেই যে গেল আর কেউ ফিরে এলো না। পশুরাজ এই খবর পেয়ে ভয়ের চোটে বন ছেড়ে চলে গেল অন্য বনে। শেয়াল পড়ে গেল মহা চিন্তায়, তবে কি এই বনে ঐরাবতের তা-বের পরিসমাপ্তি ঘটবে না? যেখানে পশুরাজ সিংহই পরাস্ত হলো,  সেখানে আর কার সাহস আছে ঐরাবতের সামনে যাবে! বনের অন্যান্য প্রাণীরাও বন ছেড়ে পালাতে চাইলো। কিন্তু শেয়াল বললো- আর দুয়েকটা দিন অপেক্ষা করো দেখি কিছু করা যায় কিনা? শেয়ালের কথামতো বনের নিরীহ প্রাণীদের লুকিয়ে থেকে আরও একদিন কেটে  গেল।

শেয়াল মহাচিন্তায় চিন্তিত। কোনো বুদ্ধি আসছে না মাথায়। এমন সময় এক মশা এসে বললো- কি মামা, এত চিন্তিত কেন? শেয়াল সব খুলে বললো মশাকে। মশা শেয়ালের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,

 

এমন বিষয় এই কাজে

মরছো ভয়ে তাই লাজে!

একতুড়িতে কেল্লাফতে,

দূর করে দেই আজেবাজে।

 

মশার কথায় শেয়াল হতবাক। যার ভয়ে স্বয়ং পশুরাজ বন ছেড়েছে সেই ঐরাবত কিনা সামান্য মশার কাছে আজেবাজে! হতাশার মাঝেও হাসতে লাগলো শেয়াল। শেয়ালের হাসি দেখে মশা আবার বলে উঠলো,

 

ছোট হলেও গোলমরিচের

অনেক অনেক ঝাল বেশি।

তাই হেসো না, মশা হলেও

হাতি-ঘোড়ার খাল পেষি ।

এবার মশার কথাগুলো গুরুত্ব দিয়ে শেয়াল বললো, তবে আর অপেক্ষা নয়। বনের নিরীহ প্রাণীদের রক্ষা করতেই হবে। সুতরাং তুমি তোমার কাজ শুরু করো।

পরের দিনের ঘটনা। মশা তার দলবল নিয়ে ঐরাবতের সামনাসামনি হলো। ঐরাবতকে ডেকে বললো, তোমার অত্যচারে বনের প্রাণীরা খুবই অতিষ্ঠ। আর অত্যচার নয়, এবার তাড়াতাড়ি বন ছেড়ে চলে যাবে, আমরা এই আশা করছি। নেতা মশার কথায় ঐরাবত অট্টহাসিতে  ফেটে পড়লো। বললো, আমার শুঁড় দেখেছিস? এক আছাড়ে তোদের যমের ঘরে পাঠাবো। সময় থাকতে পালিয়ে যা। আজ পর্যন্ত এ সুযোগ কাউকে দিইনি। তোরা অতিনগণ্য, তাই এই সুযোগ দিচ্ছি।

নেতা মশা একটু হেসে বললো, শুঁড়ের বড়াই করো না। শুঁড় আমাদেরও আছে। আমাদের শুঁড়গুলো তোমাদের মতো অত্যাচারীদের রক্তও চোষে। এই বলে দলবেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়লো ঐরাবতের ওপর। ঐরাবত যে শুঁড়ের অহংকারে এতদিন এতকিছু করলো, আজ সে শুঁড় দিয়ে মশা তাড়াতে অক্ষম হয়ে পড়লো। অবশেষে বনের নিরীহ প্রাণীদের আর কোনো ক্ষতি করবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মশাদের সাথে আপোষ করে  এ যাত্রা সে রক্ষা পেল। এরপরে সে বনের নিরীহ প্রাণীদের আর কোনো ক্ষতি না করে মিলেমিশে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো।