শিল্পীদের ক্ষোভ, সুষ্ঠু তদন্তের দাবি #
নিজস্ব প্রতিবেদক :
১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামে সঙ্গীত ভবন প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাজারো সঙ্গীত শিল্পীর জন্ম হয়েছে সঙ্গীত ভবন থেকে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই সঙ্গীত ভবনের হারমনিয়াম, তবলা, গিটারসহ কক্ষ ভাংচুর করা হয়েছে শুক্রবার দুপুরে। নগরীর প্রবর্তক পাহাড়ের পাদদেশে প্রবর্তক সংঘের নেতৃত্বে এই হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। আর এই হামলাকে পুরো সংস্কৃতি জগতের ওপর হামলা বলে মনে করছে সংঙ্গীত শিল্পীরা। একইসাথে এর সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেছে তারা।
প্রবর্তক পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠা এই সঙ্গীত ভবনে হামলা চালিয়ে জরাজীর্ণ টিনশেডের ভবনের সামনের বেড়া ভেঙ্গে ভেতরেও তা-ব চালানো হয়। হারমোনিয়াম-তবলাসহ আসবাবপত্র ভাংচুর ও তছনছ করা হয়। উপড়ে ফেলা হয় ভবনের সামনের গাছপালা।
কারা এই হামলা চালিয়েছে জানতে চাইলে সঙ্গীত ভবনের সেক্রেটারি নূর নবী মিলন বলেন, প্রবর্তক সংঘের ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষকদের নেতৃত্বে আমাদের ভবনে হামলা চালিয়েছে। বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী প্রিয়রঞ্জন সেনগুপ্ত মেয়ে কাবেরি সেনগুপ্ত এই সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁকেও তারা মারতে উদ্যত হয়েছিল।
কিন্তু কেন হামলা চালানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সঙ্গীত ভবনের সংস্কার করতে গেলে তারা (প্রবর্তক সংঘ) বাধা দেয় গত সপ্তাহের শুক্রবার। পরবর্তীতে আজ শুক্রবার সকালে কাজ করতে গেলে আবারো বাধা দেয়। পরে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ এসে মধ্যস্থতা করে এবং বিকেলে এবিষয়ে Ÿৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার কিছুক্ষণ পর এসেই তারা হামলা করে।’
হামলা করার কারণ জানতে চাইলে প্রবর্তক সংঘের সেক্রেটারি তিনকড়ি চক্রবর্তী বলেন, ‘বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ প্রিয়রঞ্জন সেনগুপ্তের সাথে ১৯৬৮ সালে ভাড়া চুক্তি নিয়ে এখানে সঙ্গীত ভবন করতে দেয়া হয়েছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর তার বড় ছেলে দীপক সেনগুপ্তের নামে ভাড়ার রশিদ কাটা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে এনিয়ে আর চুক্তি নবায়ন হয়নি। পরবর্তীতে প্রিয়রঞ্জন সেনগুপ্তের মেয়ে কাবেরি সেনগুপ্ত এটি পরিচালনা করলেও নতুন করে চুক্তিনামা নবায়ন করতে বলা হলেও তা নবায়ন করা হয়নি। ২০১৬ সাল থেকে তারা আদালতে মামলা করে এবং সেই অনুযায়ী ভাড়া আদালতের মাধ্যমে পরিশোধ করে আসছে। কিন্তু তারা তো আমাদের ভবন সংস্কার করতে পারে না।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে সঙ্গীত ভবনের সেক্রেটারী নূর নবী মিলন বলেন, ‘আদালত আমাদেরকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ করতে নিষেধ করেছে। একইসাথে ভবনের সংস্কার কাজ করতে কোনো বাধা নেই। আর ভবনের দরজা জানালা আমরা নিজ খরচেই সংস্কার করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। তাই এতে প্রবর্তক সংঘ বাধা দেয়ার কিছু নেই। তারপরও তা পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মধ্যস্থতা করে আসছিল। কিন্তু সেই সুযোগ না দিয়ে তারা হামলা চালালো।’
এদিকে এই ভাংচুরের প্রতিবাদে বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী সাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ থাকতেই পারে। আর আদালত যদি সঙ্গীত ভবনকে ওখান থেকে চলে যেতে বলে তাহলে চলে যাবে। সেটা আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। কিন্তু এভাবে ৫০ বছরের পুরনো একটি সঙ্গীত ভবনে হামলা চালিয়ে একজন শিল্পীর হারমনিয়াম, তবলা ভেঙ্গে ফেলবে তা তো হতে পারে না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। অন্যথায় সারাদেশে সংস্কৃতিকর্মীরা রাস্তায় নেমে আসবে।
এবিষয়ে কথা হয় পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়ার সাথে। তিনি বলেন, আমরা উভয় পক্ষের চুক্তিনামা ও আদালতের আদেশ পর্যালোচনা করে দেখছি। তবে, এভাবে কেউ ভাংচুর চালাতে পারে না।
উল্লেখ্য, সঙ্গীত ভবন ১৯৬৬ সালে মেহেদীবাগে গড়ে তোলা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে তা প্রবর্তক সংঘের পাদদেশে চলে যায়। এখনো সেখানেই এটি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।