একহাতি বাইক রাইডার জাবেদের তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ ভ্রমণ

একহাতি বাইক রাইডার জাবেদ

মো. জাহেদ হোসাইন, সাতকানিয়া

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল মোটরবাইক নিয়ে সারাদেশ ভ্রমণ করবেন। ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান হাত হারিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে যায় বাইক বিলাস। চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে ভেঙ্গে যায় মনের গভীরে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। পারিবারিক বিধি নিষেধের জালে আটকে বন্ধ হয়ে যায় তার বাইক চালানো। লালিত স্বপ্ন ঝরা ফুলের মত খসে পড়লেও থেমে যায়নি জাবেদ জাহাঙ্গির রিপনের উদ্যোম।
শুরু করেন একহাতে মোটরবাইক চালানোর কৌশল রপ্ত করার প্রাণপন চেষ্টা। একসময় পুরোপুরি করায়াত্ত হয় একহাতে বাইক চালানোর কৌশল। এখন তিনি একহাতি বাইক রাইডার।
বলছিলাম সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জাবেদ জাহাঙ্গীর ওরফে রিপনের কথা। যিনি এলাকায় ওয়ান হ্যান্ডেড বাইক রাইডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
একহাতে মোটরবাইক চালিয়ে দেশের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে ভ্রমন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তেঁতুলিয়া থেকে রওনা হয়ে একহাতি বাইক রাইডার জাবেদ ২৩ ঘন্টায় টেকনাফ পৌঁছে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন।
জাবেদ জাহাঙ্গীর রিপন জানান, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণের জন্য প্রথমে সাতকানিয়া উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাইক চালিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলা হয়ে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় গিয়ে পৌঁছান। অতপর তেঁতুলিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ২৩ ঘন্টা একহাতে বাইক চালিয়ে দীর্ঘ ৯শ’ ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি টেকনাফ জিরো পয়েন্টে এসে পৌঁছান।
জানা যায়, ২০১৬ সালে জাবেদ জাহাঙ্গীর রিপন বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণের উদ্দেশ্যে নিজ বাড়ি থেকে বাসযোগে যাত্রা করেন। তিনি বাসের ডান পাশের সিটে জানালা দিয়ে ডান হাত বের করে বসেছিলেন। তাদের বাসটি কেরানিহাট ষ্টেশন পার হয়ে সাতকানিয়া রাস্তার মাথায় গিয়ে পৌঁছালে চট্টগ্রামগামী একটি বাসের ধাক্কায় তার ডান হাতটি বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন। এরপর ২ বছর বিরতি দিয়ে ২০১৮ সালে এক হাতে মোটরবাইক চালনো রপ্ত করেন। তখন থেকে বাইক চালিয়ে বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ শুরু করে অদ্যাবধি চালিয়ে যাচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত তিনি একহাতে মোটরবাইক চালিয়ে পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, ঢাকা, গাজীপুর , নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও পঞ্চগড়সহ ৫৯টি জেলা ভ্রমণ করেছেন। একযোগে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণের পাশাপাশি বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্ন দেখছেন একহাতি বাইক রাইডার জাবেদ জাহাঙ্গির ওরফে রিপন।
তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ ভ্রমণের সময় জাবেদ জাহাঙ্গীর রিপনের সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন তারই বন্ধু মো. কায়েস উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি মোটরবাইক চালাতে পারি না। সড়ক দুর্ঘটনার কথা মাথায় আসলে বাইকে চড়তেও আমার ভয় হয়। বন্ধু জাবেদ জাহাঙ্গীর রিপনের অনুরোধ রক্ষার্থে তার মোটরবাইকের পেছনে বসে সফরসঙ্গী হিসেবে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ ভ্রমণ করেছি ৷ বন্ধু জাবেদ জাহাঙ্গীর রিপন একহাতে মোটরবাইক চালিয়ে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পৌঁছানো অসম্ভবই মনে করেছিলাম। পরে বুঝলাম আমার ধারণা ভুল ছিল। আমি তার এ বিরল ঘটনার সাক্ষী। আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
জাবেদ জাহাঙ্গীর রিপন বলেন, আমি যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তখন থেকে মোটরবাইক চালানো শুরু করি। তখন থেকেই মোটরবাইকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব ভ্রমণ করার স্বপ্ন লালন করছি। তবে ২০১৬ সালে বাস দুর্ঘটনায় আমার ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আমার মন থেকে স্বপ্ন বিচ্ছিন্ন হয়নি। যারফলে আজকের এ বাইক ভ্রমন সম্ভব হয়েছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার ডান হাত না থাকায় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আমাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোটরবাইকের রেজিষ্ট্রেশন ইস্যু করছে না। এতে বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বর্তমানে আমি আমার মোটরবাইকটি আমার বাবার নামে রেজিস্ট্রেশন করে ব্যবহার করছি। আমি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি আমাকে যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স ও আমার নামে মোটরবাইক রেজিস্ট্রেশন ইস্যু করা হয় আমি একদিন বিশ্ব জয় করে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করতে পারব।