বিপাকে কয়েক হাজার মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক,রাঙামাটি
একটি নির্মানাধীণ ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনের সামনে থেকে বৈদ্যুতিক পিলার সরাতে হবে, শুধুমাত্র এই একটি কারণে, কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই সপ্তাহের প্রথম কর্মদিনে অন্তত সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রেখেছে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগ।
রোববার প্রথম কর্মদিবসে এই কাজ করে কাঠালতলি, ফিশারি ও পৌর এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে বিপাকে ফেলে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমবার ফোনে কিছুই জানেন না দাবি করার পরে আবার দ্বিতীয়বার ফোনে বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী দুজনই।
বিদ্যুৎ বিভাগ সুত্র জানাচ্ছে, ‘সম্প্রতি শহরের কাঠালতলি এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনের বৈদ্যুতিক খুটি তারসহ সরানোর অনমুতি দেন নির্বাহী প্রকৌশলী। সচরাচর এমন কাজ বন্ধের দিনে করা হয় এবং আগেই ওই এলাকায় মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়। তবে ‘এই ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি।’ কেনো করা হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানালেন,আসলে আবেদনকারী খুব তাড়াহুড়ো করছিলো এবং চাপ দিচ্ছিলো, ফলে আমরা অনেকটা বাধ্য হয়েই দ্রুত কাজটি করতে গিয়ে হয়ত নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে। তাই আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে এটি ঠিক হয়নি,অবশ্যই আগেই স্থানীয়দের জানানোর দরকার ছিলো।’
রাঙামাটি পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জামালউদ্দিন জানান, ‘একজনের জন্য একশজনকে কষ্ট দেয়ার কোন মানে নাই। অবশ্যই আগে জানানো উচিত ছিলো। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে একজনের জন্য একটা পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অমানবিক। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে আমাকেও তো অন্তত জানানো দরকার ছিলো।’
কাঠালতলি এলাকার দায়িত্বে থাকা উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. এরশাদ আলী জানান, আমাকে জানানো হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের বিপরীতে একটি নির্মাণাধীন ভবনের বিদ্যুৎ পিলার তারসহ সরাতে হবে। কিন্তু সেটা যে বন্ধের দিন বাদ দিয়ে অফিস খোলার দিনে করবে কিংবা এত দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হবে, সেটা আমিও জানিনা। আমাকে দুপুরে বলা হয়েছিলো, অনুমোদিত জায়গার দুই ফুট দূরত্বে পিলার বসাতে, আমি বলেছি নিয়মের বাইরে আমি কিছু করতে পারব না। পুরো বিষয়টি আমাদের সহকারী প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান শীতল দেখছেন, তিনিই বলতে পারবেন বিস্তারিত। আমি কিছু জানিনা। তবে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে আমার অনুমতি নিতে হয়, কিন্তু আমার অনুমতিও নেয়া হয়নি।’
যোগাযোগ করা হলে ওই খুঁটি অপসারণে নেতৃত্ব দেয়া সহকারী প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান শীতল বলেন, আমি যা করেছি, সবই নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে করেছি, ওনি যা বলছেন, যেভাবে বলেছেন,সেভাবেই করেছি। ওনার সাথে কথা বলেন আপনি,ওনি আপনাকে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।’
নির্বাহৗ প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমানের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি জানান, আমিতো কিছু জানিনা। কি হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি। খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।’
পরে আবার ফোন করা হলে তিনি বলেন,‘ আমি দুঃখিত যে, এমন একটি কাজ করতে হয়েছে অফিস খোলার দিনে এবং দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে। সাধারণত দুই ঘণ্টার মধ্যে কাজ হয়ে যায়, কিন্তু কারিগরি বিষয় ও একটি সিদ্ধান্তের কারণে বেশি সময় লাগছে। এতটা সময় লাগবে আমি ভাবিনি।’ স্থানীয়দের আগাম না জানানোর বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, অবশ্যই আগে জানানো দরকার ছিলো,কিন্তু আবেদনকারীদের তাড়ার কারণে আমরা সেটা করতে পারিনি; এলাকার মানুষ কষ্ট পেলো, আমি এই কারণে সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ দুপুর বারোটায় বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করা হয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন সন্ধ্যা সাতটায় চালু হয়েছে সেই লাইন।
রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কামালউদ্দিনকে বিষয়টি জানালে তিনি প্রথমে এই বিষয়ে কিছু জানেননা জানালেও কিছুক্ষণ পরে নিজেই ফোন করে জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন এবং কাজটি ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, আমি নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্টদের বকাঝকা করেছি। তিনি দুঃখপ্রকাশ করে বলেন,অবশ্যই আগে এলাকাবাসীকে জানানো উচিত ছিলো। এটা কেনো হলো,কিভাবে হলে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’