সুপ্রভাত ডেস্ক »
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ৫০টির বেশি ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করতে চলমান একটি গবেষণায় ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)-এর তত্ত্বাবধানে করা গবেষণাটির ট্রায়ালে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। খবর বিবিসির।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের চিকিৎসকদের কাছে ক্যান্সারের লক্ষণ নিয়ে আসা মোট পাঁচ হাজার রোগীর ওপর ট্রায়ালটি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীদের ৮৫ ভাগের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ধরন সম্পর্কেও জানা গিয়েছে।
গবেষণাটিতে মূলত ‘গ্যালেরি টেস্ট’ পদ্ধতি ব্যবহার করে রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ক্যান্সারের কারণে দেহের কোষের মধ্যকার জেনেটিক কোডের পরিবর্তন খুঁজে দেখা হয়।
টেস্টটি ব্যবহার করে দ্রুত ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হলে বহু ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
এ গবেষণার সাথে যুক্ত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানান, আপাতত অনেকাংশে ‘পরীক্ষামূলক’ অবস্থায় থাকলেও এ পদ্ধতি ব্যবহারে ক্যান্সার আরও বেশি করে শনাক্ত করা সম্ভব।
সাধারণত ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীদের তা শনাক্তে বহু ধরনের পরীক্ষা করাতে হয়। পরবর্তীসময়ে স্ক্যান এবং বায়োপসির মতো প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়।
প্রথাগত উপায়ে শনাক্ত করা এসব ক্যান্সার গবেষণায় রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শতকরা ৭৫ ভাগ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে স্বাভাবিক পরীক্ষায় ক্যান্সার শনাক্ত হয়নি এমন ক্ষেত্রেও গবেষণার রক্ত পরীক্ষায় ২.৫ ভাগ ব্যক্তির ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে।
যদিও ক্যান্সার শনাক্তে নির্ভুলতার বিচারে এটিকে শতভাগ কার্যকরী বলে ধরে নেওয়া যাচ্ছে না। তবে টেস্টটি রোগীদের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে বলে মনে করেন গবেষণাটির মূল গবেষক প্রফেসর মার্ক মিডলটন।
তিনি বলেন, ‘টেস্টটি ক্যান্সারের ধরন শনাক্তে ৮৫ ভাগ নির্ভুলতার পরিচয় দিয়েছে। এটা বেশ উপকারী হতে পারে। কেননা বেশিরভাগ সময়েই লক্ষণ নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকেরা তাৎক্ষণিক ঠিক কোন টেস্টটি দেবেন সেটা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন না।’
প্রফেসর মার্ক আরও বলেন, ‘আমাদের গবেষণার রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ঠিক কোন টেস্টটি করতে হবে সেটা নিয়ে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এতে করে আমরা প্রথম ধাপেই সঠিক টেস্টটি নিশ্চিত করা যাবে।’
এ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য শিকগোতে অনুষ্ঠান হতে যাওয়া ‘দ্য আমেরিকান সোসাইটি অভ ক্লিনিক্যাল অনকোলজিৎ’ কনফারেন্সে তুলে ধরা হবে। একইসাথে দ্য ল্যান্সেট অনকোলজি জার্নালে তা প্রকাশ করা হবে।
এনএইচএস-এর পক্ষ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার কোম্পানি গ্রেইল কর্তৃক সমৃদ্ধ করা গ্যালেরি টেস্টটি ক্যান্সারের আপাত লক্ষণ নেই এমন মানুষের ওপরও ব্যবহার করা হচ্ছে। লক্ষণ ছাড়াই টেস্টটি প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকা ক্যান্সারও শনাক্ত করতে পারে কি না সেটিই যাচাই করে দেখাই এর উদ্দেশ্য।
চলতি বছরের মধ্যেই এর ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদি টেস্টের ফলাফল ইতিবাচক হয় তবে এনএইচএস ২০২৪ ও ২০২৫ সালে ইংল্যান্ডের আরও ১০ লাখ মানুষের ওপর টেস্টটি প্রয়োগ করবে। এছাড়াও ইতোমধ্যেই টেস্টটি মাথা, ঘাড়, অন্ত্র, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয় ও গলার মতো জটিল সব ক্যান্সার শনাক্তে বেশ কার্যকরী ফলাফল দিয়েছে।
এ সম্পর্কে ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে-এর ড. ডেভিড ক্রসবি বলেন, ‘গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে টেস্টটি চিকিৎসকদের ক্লিনিক্যাল মূল্যায়নে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি চিকিৎসক ও রোগীদের জন্য ঠিক কতটা কার্যকরী সেটি বুঝতে আরও বৃহৎ পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।’