নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় গোটা দেশ লজ্জায়, ক্ষোভে, প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে। এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১ মাস আগে। নির্যাতনকারী দুবর্ৃৃত্তরা এই নির্যাতনের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টনক নড়ে। র্যাব ও পুলিশ আসামিদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। দুর্বৃত্তরা ঘটনার দিন ঐ নারীর স্বামীকে আটকে রেখে তাঁকে বিবস্ত্র করে সংঘবদ্ধভাবে নির্যাতন করে কেবল ঐ নারীকেই চরম অসম্মান করেনি বরং প্রশাসন, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এটি দুঃখজনক যে, পাড়া প্রতিবেশিরা এ ধরণের নারকীয় নির্যাতনের কথা জেনেও চুপ ছিলো। দুর্বৃত্তরা ক্ষমতাশালী চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে এতদিন কি করে দাপটে ঘুরে বেরিয়েছে! আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর এত সোর্স আছে, আছে নানা গোয়েন্দাবাহিনী তারপরও তারা এই এক মাস ঘটনাটি জানতে পারলো না! তাহলে জনগণের জানমাল কার কাছে নিরাপদ থাকবে?
সাম্প্রতিক সময়ের নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদক কারবার ও নানা অপরাধকর্ম বেড়ে যাওয়ায় জনসাধারণের মনে প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয় যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা? বেগমগঞ্জের নারী নির্যাতনের বীভৎসতা দেশবাসী এবং সরকারকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। নির্যাতনের প্রতিবাদকারী নারীÑপুরুষ প্রতিনিধিরা বলছেন বিচারহীনতার কারণেই নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। দুর্বৃত্তরা গ্রেফতার হলেও আইনের নানা ফাঁকফোকরে তারা জামিন পেয়ে যায়। এতে বাদিপক্ষ আরো হতাশা এবং বিপদে পড়ে। এ ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়ায় কোনরূপ ফাঁক থাকা চলবে না। ক্ষমতার কাছে, লোভের কাছে অনৈতিকতার কাছে কোনোভাবেই আটকে যাওয়া চলবে না আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর। নারী নির্যাতনের এই বর্বরোচিত ঘটনার গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন নজরে আনলে ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ কিছু আদেশ দেন। হাইকোর্ট এই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি ছিল কিনা তা অনুসন্ধানে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটি করে দিয়েছেন। হাইকোর্ট ভিকটিমের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে নোয়াখালীর জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে এবং এই ধরণের নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যম থেকে অপসারণে বিটিসিএলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ধর্ষণ কিংবা নির্যাতনের ব্যাপারে আরো কঠোর আইন প্রণয়ন করা উচিত। তাছাড়া এসব নারকীয় অপরাধের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্রুত অপরাধীদের ধরতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অনেক সময় দুর্ঘটনা বা নির্যাতনের শিকার পরিবার মানসম্মান, ভয়ভীতি এবং অর্থের কারণে থানায় অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করতে আসে না। নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রশাসনকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এসবের দ্রুত বিচার করতে হবে।
বেগমগঞ্জে নারীর অসম্মান ও নির্যাতনের ঘটনা যে সকল দুর্বৃত্ত ঘটিয়েছে তাদের সকলকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
মতামত সম্পাদকীয়