রাজিব শর্মা »
কোন কারণ ছাড়াই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ফের অস্থির চিনির বাজার। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি মণে (৩৭.২৩৭ কেজি) চিনির দাম বেড়েছে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে খুচরা বাজারেও বেশ চড়া দাম। বাজার থেকে অনেকটা উধাও হয়ে গেছে মোড়কজাত চিনি। এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
বাজারে বর্তমান পাইকারিতে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহেও ছিল ৪ হাজার ৪০০ টাকার কাছাকাছি। এদিকে গতকাল খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৯৫০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৯৯০ টাকা ধরে। সেই হিসেবে বর্তমান সরকারের নির্ধারিত খুচরা মূল্যের দরেও পাইকারিতে চিনি বিক্রি হচ্ছে না। সরকার খোলা চিনিতে ১২০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করলেও যা পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১২৬ টাকারও বেশি দামে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে কেজি ১৩৩ থেকে ১৩৫ টাকা দরে।
অন্যদিকে, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে গতকাল বাজারে চিনি বিক্রি হয়েছে কেজিতে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। যা প্রতি মণে (৩৭.২৩৭ কেজি) দাম পড়ে ৪ হাজার ৮৪০ টাকা থেকে ৫ হাজার ২১৫ টাকা পর্যন্ত। একইমানের চিনি গত বছর এ দিনে কেজি বিক্রি হয়েছিল ৭৮ টাকা থেকে ৮২ টাকা পর্যন্ত। এক বছরের ব্যবধানে চিনিতে বেড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশের বেশি।
তবে সরকার দর নির্ধারণ করে দিলেও বাজার তদারকিকে দুষছেন ক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, সরকার চিনির দর বারবার নির্ধারণ করে দিলেও বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন নজরদারি নেই। যার ফলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের অবহেলার সুযোগে এক হাত করে নিয়েছেন।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম। সরবরাহ ঘাটতির কারণে চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠছে। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চিনির সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা তাদের মনগড়া দামে চিনি বিক্রি করছে। খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক কয়েকটি সিন্ডিকেট চিনির বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই সরকারের নির্ধারিত দরে কোথাও মিলছে না খোলা চিনি।
এদিকে গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়। সরকারের সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাজারে চিনির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখা, সাধারণ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) কর্তৃক প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (খোলা) মিলগেটে মূল্য ১১৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১২০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (প্যাকেট) মিলগেটে ১১৯ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২১ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত এ দামে নগরীর কোথাও বিক্রি হচ্ছে না চিনি।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার বার বার চিনির বাজার নির্ধারণ করছে। তবে নির্ধারিত দরে কখনো বিক্রি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। চিনির বাজারে সঠিক তদারকির অভাব রয়েছে। তদারকি প্রতিষ্টানগুলো মাঝে মাঝে দুয়েকটি অভিযান চালালেও তার প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে পড়ছে না। সরকার পাইকারি পর্যায়ে ১২০ টাকা দর নির্ধারণ করে দেয়, কিন্তু খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে মণ প্রতি (৩৭.৩২ কেজি) ৪ হাজার ৬০০ টাকার উপরে। যা কেজি হিসাবে ১২৫ টাকার বেশি।
চিনি বেশি দরে বিক্রি করার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিনির মিল মালিকরা দফায় দফায় নানা ইস্যুতে চিনির দাম বাড়াচ্ছে। একদিকে আমদানিকারকরা ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এরপর চিনির দাম বাড়িয়ে দেয়। তখন তারা বলেন, ‘সরবরাহ কমছে, যার ফলে চিনির দাম বাড়ছে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ব্যবসার প্রচলন রয়েছে। কোনো পণ্যের লেনদেন ছাড়াই একটি ডিও কয়েক দফা হাতবদল হয়। যতবার হাতবদল হয় ততবার ডিও বা পণ্যের দামও বেড়ে যায়। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে কয়েক দফা আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই ডিও স্লিপটিও বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়।