সুপ্রভাত ডেস্ক »
পূর্ণিমায় সৃষ্ট জোয়ারের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ উপকূলীয় এলাকায় পানির চাপ বেড়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হানছে। এর মধ্যে বুধবার সকাল থেকে কক্সবাজার শহরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কক্সবাজার সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়ছে উত্তাল ঢেউ। এমন পরিবেশের মধ্যেই পর্যটকরা ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে গোসল করতে নামছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড কর্মীদের বিধি-নিষেধও মানছেন না তারা। খবর ঢাকা পোস্টের।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, উত্তাল সমুদ্রেই অর্ধলাখ পর্যটক গোসল করতে নেমেছেন। এ সময় বেসরকারি লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফগার্ডের অন্তত ২০ জন কর্মীকে বালুচরে দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের উঠে আসার জন্য আহ্বান জানাতে দেখা গেছে। এছাড়া উত্তাল সাগরে নামতে নিষেধ করে সৈকতে একাধিক লাল নিশানা (পতাকা) ওড়ানো হলেও সেদিকে কারও নজর নেই।
সি সেফ লাইফগার্ডের কর্মকর্তা জয়নাল আবদিন ভুট্টু বলেন, ঈদের চতুর্থ দিন পর্যন্ত তেমন পর্যটকের সমাগম ছিল না। মঙ্গবার (৪ জুলাই) থেকে পর্যটকের সমাগম বেড়েছে। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, সিগাল ও লাবণী পয়েন্টের চার কিলোমিটার এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক পর্যটক ঘুরতে এসেছেন। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে অনেক পর্যটক গোসল করতে নামছেন। তাদের এ বিষয়ে সর্তক করা হলেও তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। এই মুহূর্তে পর্যটক ভেসে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। দুই দিন আগেও একজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সকাল থেকে ঢেউয়ের ধাক্কায় অন্তত ছয়জন পর্যটকের ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে লাইফগার্ড কর্মীদের তৎপরতায় তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে।
সি গাজীপুর রিসোর্টের মালিক আব্দুল জব্বার বলেন, ঈদের কয়েকদিন পর্যন্ত তেমন পর্যটক ছিল না। আজ হঠাৎ পর্যটকের সমাগম বেড়েছে। গতকাল ৭০ ভাগ বুকিং হলেও আজ শতভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। এই চাপ আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত থাকবে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক ইমরান বলেন, সাগরে ঢেউ এত উত্তাল হবে যে সেটা আগে কল্পনা করিনি। পানি দেখে অনেক ভয় হচ্ছে। তারপরও সাহস করে পানিতে নামলে স্রোতের টানে প্রায় ভেসে যাচ্ছিলাম। পরে লাইফগার্ডের সহায়তায় উঠে আসি।
কামরুল নামে আরেক পর্যটক বলেন, সকাল থেকে পরিবার নিয়ে গোসল করতে আসছিলাম। সাগর উত্তাল দেখে আর গোসল করিনি। সকাল থেকে দেখছি অনেক পর্যটক ভেসে যাচ্ছিল। পরে লাইফগার্ড তাদের উদ্ধার করে। এই মুহূর্তে সাগরে নামা বিপদজনক।
সুগন্ধা পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্কে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ বলেন, সমুদ্র উত্তাল তাই পর্যটকদের নামতে বারবার মাইকিং করে নিষেধ করা হচ্ছে। এছাড়া পুরো সৈকতে আমাদের টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তারপরও পর্যটকরা বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। পর্যটকের সমাগম বেশি হওয়ায় সামাল দেওয়া একটু কঠিন হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, একদিকে পূর্ণিমার প্রভাব অন্যদিকে সিলেটসহ উত্তরবঙ্গে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সমুদ্রে পানির চাপ বেড়েছে। ফলে উত্তাল ঢেউ সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়ছে। দু-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করি।