উচ্চশিক্ষা বাণিজ্যকরণের অনুশীলন চলছে

বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ২য় সমাবর্তনে শিক্ষা উপমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক »

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশিক্ষাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকরণের অনুশীলন চলছে। যার কারণে একজন শিক্ষার্থীকে বিপুল অর্থ ব্যয় করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং আমেরিকার মতো দেশগুলো তা করেছে । তারা নিজেরাই একটা র‌্যাংক তৈরি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সে র‌্যাংকিং আবার নিজের প্রতিষ্ঠানে দেয়। শীর্ষ পর্যায়ে অন্য কোনো দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিতে চায় না। যে কারণে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী সেখানে পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। অথচ সেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে কোটি টাকা খরচ হয়। এভাবে সেই দেশগুলো বিশ্বে উচ্চশিক্ষার বাজার সৃষ্টি করছে।

গতকাল শনিবার বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ২য় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিশ্বকর্মী হওয়ার অহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানে দেশীয় দক্ষ কর্মী পাওয়া যায় না। অথচ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। কিন্ত ঠিকই বিদেশ থেকে দক্ষকর্মী এনে প্রতিষ্ঠান চালাতে হয়। ব্যাংক নতুন উদোক্তাদেরদের পুঁজি দিতে চান না। দেশে উদোক্তা হতে গেলেও পড়তে হয় নানা সমস্যায়। তাই সকল শিক্ষার্থীকে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। ভাষা, কম্পিউটারসহ নানা বিষয়ে দক্ষ হয়ে শুধু দেশে নয় বিশ্বকর্মী হতে হবে।

সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমেদ এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আসিফ।

সমাবর্তনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এফ এম আওরঙ্গজেব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, গ্রাম থেকেই বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় আলো ছড়াচ্ছে। সবকিছু শহরকেন্দ্রিক এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার মানসিকতা তৈরিতে সহযোগিতা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সকলের ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় মানে শহরে হবে। আমরা এই ধারণা পরিবর্তন করতে চেয়েছি। আমরা শহর নয়, গ্রামকে উন্নত করার মিশনে নেমেছি। মনে করি-আমরা সফল হয়েছি। কারণ আমাদের প্রতিষ্ঠানে এখন শহর থেকেও পড়তে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম সমাবর্তন হয় ২০১৮ সালে। গতকাল ছিলো দ্বিতীয় সমাবর্তন। এসময় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের বিবিএ প্রোগ্রামের অধীনে ২ হাজার ৭৬ জন, এমবিএ প্রোগ্রাম ৮৩৭ জন, বিজ্ঞান ও প্রকৗশল অনুষদের অধীনে বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্সে অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ৩৫৫ জন, বি.ফার্ম অনার্স প্রোগ্রামের অধীনে ২৩৩ জন, আইন, কলা এবং সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে বি এ অনার্স ইন ইংলিশ প্রোগ্রামে ২৯৩ জন, ব্যাচেলর অব ল প্রোগ্রামে ৬৮৯ জন এবং এমএ ইন ইংলিশ প্রোগ্রামে ১০৭ জনকে সনদ প্রদান করা হয়েছে। মেধানুসারে ৫ জনকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল, ৪ জনকে ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল ও ৬ জনকে চেয়ারম্যান গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়েছে।

বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ২০০১ সাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। প্রায় ১০০ একরের ক্যাম্পাসে ৩টি অনুষদের অধীনে ৬টি বিভাগ রয়েছে এবং বিভাগসমূহের মাধ্যমে ৯টি প্রোগ্রামে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।