নিজস্ব প্রতিবেদক »
ঈদের আগেই ঊর্ধ্বমুখী চাল, ভোজ্যতেল, মসলাসহ নিত্যপণ্যের বাজার। কোনো পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি নেই; তবু কমছে না দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে জিরা, মরিচ, লবঙ্গ, এলাচ, ধনিয়ার দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫০ টাকার বেশি। তাছাড়া খোলা চিনিগুঁড়া চালের পাশাপাশি প্যাকেটজাত পোলাও চালের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। সবজি ও মাছের বাজার চড়া। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিনসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, মসলার বাজারে প্রতিকেজি জিরা ৮৪০ থেকে ৯২০ টাকা, জিরা গুঁড়া ১ হাজার ৪০০ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, জয়ত্রি ৩ হাজার ২০০ টাকা, আলুবোখারা ৮০০ টাকা, কাজুবাদাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা ও দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ টাকায়। তাছাড়া শুকনা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৪৩০ থেকে ৪৮০ টাকায়।
অন্যদিকে বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে প্যাকেটজাত পোলাও চালের দাম। কয়েকদিন আগে যে মানের প্যাকেটজাত পোলাও চিনিগুঁড়া চাল বিক্রি হয়েছিল ১৫০ টাকায় তা এখন ১৬৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এদিকে খোলা বাজারেও প্রতিকেজি চিনিগুঁড়া চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। গতকাল খোলা বাজারে চাল চিনিগুঁড়া চাল বিক্রি হয়েছে কেজিতে ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা। তাছাড়া অন্যান্য চালের দাম স্থিতিতে রয়েছে।
তবে কিছুটা ভাটা পড়েছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে স্থিতিতে রয়েছে রসুন ও আদার দাম। গত বছরের তুলনায় আদার দাম এখনও দ্বিগুণ। বাজারে আদা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, রসুন ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা।
অন্যদিকে যোগান বাড়লেও ক্রেতার চাপ কমার ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে নিম্নমুখী ব্রয়লার মুরগির বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে আরো ১০ টাকা কমে গতকাল বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা এবং দেশি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
তাছাড়া কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তির পর স্থিতিতে রয়েছে ডিমের বাজার। গতকাল বাজারে লেয়ার (লাল) ডিম বিক্রি হয়েছে ডজন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা আর হাঁসের ডিম ১৮৫ টাকা।
এদিকে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ চড়া হয়ে উঠেছে সবজির বাজার। বাজারে টমেটো ও বরবটি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার বেশি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তাছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়ে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ঢেড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বকসিরহাটের সবজি ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, ‘পশু বহনের জন্য চালকরা পরিবহন খরচ বাড়িয়েছে। যার ফলে বাজারে সবজি তেমন আসেনি। যোগান কম থাকাতেই একটু বাড়তি দিকে সকল ধরনের সবজি।’
অন্যদিকে সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধের কারণে সকল ধরনের মাছের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আরো বাড়তে পারে বলে জানান মাছ ব্যবসায়ীরা।
গতকাল বাজারে লইট্যা ২৫০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা, চাষের কই ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, রূপচান্দা ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বক্সিরহাটের মাছ ব্যবসায়ী মো. রমজান বলেন, ‘বাজারে সকল ধরনের মাছের দাম প্রায় দ্বিগুণ। আরো দাম বাড়তে পারে। এখন অনেক মাছ ব্যবসায়ী মাছ বিক্রি করছেন না। ২৫০ টাকায় লইট্যা কিনে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।’
ক্রেতাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা ইস্যুতে প্রতিনিয়তই বাড়াচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। এসব যেন দেখার কেউ নেই। বাজারে কোনো ধরনের মনিটরিং নেই।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের যোগান রয়েছে। তবে অসাধু ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এর ফলে বাড়ছে পণ্যেও দাম।